ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে বসা সংঘাতের লাগাম টানতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। জি-সেভেনও নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা না বাড়ানোর লক্ষ্যে কূটনৈতিক উদ্যোগও চলছে।
গত শনিবার ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়ে ইরান এখন পর্যন্ত পালটা হামলা থেকে রেহাই পেলেও আন্তর্জাতিক স্তরে আরো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এড়াতে পারছে না সে দেশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা বুধবার ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে সে দেশের ড্রোন ও মিসাইল কোম্পানিগুলোর কার্যকলাপ চাপের মুখে পড়বে। শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেনও ইরানের অস্ত্র সরবরাহকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রস্তাব বিবেচনা করছে। ইরানের হামলার নিন্দা করে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি সমর্থনের অঙ্গীকার জানিয়ে ইইউ নেতারা সব পক্ষের উদ্দেশ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, ইরানের ওপর বড় আকারে ইসরায়েলের পালটা হামলা না চালানো জরুরি।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের সংযমের আশা করছে।তবে বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামের মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে আপাতত ইরানের তেল রপ্তানির পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে না পশ্চিমা দেশগুলো। সেটা করলে চীনও রুষ্ট হতে পারে।
শুধু ইসরায়েলের ওপর হামলার কারণে নয়, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান যেভাবে হামলাকারী দেশ হিসেবে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করে চলেছে, ইইউ তার পথে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে সেই প্রবণতা মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। এবার সেগুলোর আওতা বাড়িয়ে মিসাইল সরবরাহ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ‘প্রক্সি' শক্তিগুলিকেও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের আওতায় আনতে চাইছে ইইউ।
তবে ইরানের শক্তিশালী রেভোলিউশনরি গার্ড কর্পস বাহিনীকে ইইউ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার উদ্যোগ আইনি জটিলতার কারণে এখনো সফল হচ্ছে না। কোনো ইইউ সদস্য রাষ্ট্র সেই বাহিনীর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার প্রমাণ পেলে তবেই সেটা সম্ভব হবে বলে শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ইসরায়েলের ওপর পালটা হামলা না চালানোর চাপ থাকলেও সে দেশ কতকাল সংযম দেখিয়ে যাবে, সে বিষয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েল ও মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী শনিবারের হামলার পর ইরানের ওপর পাল্টা হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার সেই পরিকল্পনা কার্যকর করেনি।
ইসরায়েলের কান সম্প্রচার কেন্দ্রের সূত্র অনুযায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু পূর্ব পরিকল্পিত পাল্টা হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেন। আমেরিকার এবিসি নেটওয়ার্কের সূত্র অনুযায়ী, গত সপ্তাহে কমপক্ষে দুই রাত্রে ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল। তবে নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল একাই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে। তার মতে, আত্মরক্ষার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তার দেশ।