ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিমান হামলার আশঙ্কায় মিয়ানমার থেকে দলবেঁধে মানুষ থাইল্যান্ডের দিকে ছুটছেন। আজ শুক্রবার সকালে একটি সীমান্ত ক্রসিংয়ে তারা ভিড় করেছেন। থাই সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর মিয়াবতী বিদ্রোহীরা দখল করার পর থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এই শহর দখল ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিদ্রোহীরা শক্তিশালী এবং মিয়ানমারের সামরিক সরকার দুর্বল হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়াবতী শহরের পতন মিয়ানমার জান্তার জন্য একটি বড় ধাক্কা। এমনিতেই দেশটির অর্থনীতি সংকটে রয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য শহরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ শহরটি দখলের পর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) নামের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।
মিয়াবতী শহরের এক নারী ময়ে ময়ে টেঠ সান নিজের পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেছেন, আমি বিমান হামলার আশঙ্কায় ভীত। এসব হামলায় খুব বিকট শব্দ হয়, যা আমার বাড়ি কাঁপিয়ে দিয়েছে।
৩৯ বছর বয়সী এই মা সীমান্তে একমাত্র সক্রিয় ক্রসিং মায়ে সটে দিয়ে থাইল্যান্ড এসেছেন।
তিনি বলেছেন, বোমার শব্দে নিরাপত্তার শঙ্কায় তারা বাড়ি ছেড়েছেন।
তিনি বলেন, তাই আমি এখানে পালিয়ে এসেছি। থাইল্যান্ডে তারা বোমা ফেলতে পারবে না।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্নপ্রি বাহিদ্দা-নুকারা মায়ে সট ক্রসিং পরিদর্শন করবেন। এটি মিয়াবতী শহরের ময়েই নদীর তীরে অবস্থিত। শুক্রবার তিনি ক্রসিংটি পরিদর্শন করতে পারেন।
মিয়ানমার জান্তার মুখপাত্র ঝাও মিন টুন দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের কয়েকজন সেনা আত্মসমর্পণ করেছে। কারণ তাদের সঙ্গে পরিবার ছিল। তাদের ফিরিয়ে আনতে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এই বিদ্রোহ মিয়ানমার জান্তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে রাজধানী নেপিদোতে সামরিক স্থাপনায় সমন্বিত ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছে বিদ্রোহীরা।
বৃহস্পতিবার মায়ে সটকে সংযুক্ত করা একটি সেতু দিয়ে মিয়ানমারের প্রায় ২০০ সেনা পিছু হটে। এর ফলে কেএনইউ মিয়াবতী শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
ব্যাংককের থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটির সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ডুলিয়াপাক প্রিচারুশ বলেছেন, তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখনও পাল্টা হামলার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। এতে সহযোগিতা করতে পারে দেশটির বিমানবাহিনী।
তিনি বলেছেন, ফলে আসন্ন দিনগুলোতে লড়াই আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিয়ানমারে সংঘাত তীব্র হওয়ার ফলে মিয়াবতী থেকে মায়ে সট ক্রসিং দিয়ে থাইল্যান্ড যাওয়া মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ সীমান্ত পার হচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বলেছেন, মিয়ানমারের লড়াই তাদের আকাশসীমায় ছড়িয়ে পড়া উচিত হবে না।
এর আগে রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, মিয়ানমার জান্তা শক্তি হারাচ্ছে। তিনি সামরিক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছিলেন।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে থাইল্যান্ড। দেশটি জানিয়েছে, তারা এক লাখ মানুষকে আশ্রয় দিতে পারবে। একই সঙ্গে দেশটি আলোচনার উদ্যোগও জারি রেখেছে।
এদিকে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নতুন করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের হুমকি দিয়েছে। গোষ্ঠীটির প্রধান তওয়ান ম্রাত নাইং রাখাইনের সিতওয়ে ও কিয়াউক ফাইয়ু শহরের বাসিন্দাদের সতর্ক করে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে একটি আরাকান আর্মি। এই গোষ্ঠীটি অপারেশন ১০২৭-এর অংশ ছিল। গত অক্টোবরে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই সমন্বিত অভিযানে জান্তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য অঞ্চল দখল করেছিল।