সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা করার পর সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া যে কাউকে সে দেশে ঢুকে হত্যা করবে ভারত। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এমন মন্তব্যকে ‘‘উসকানিমূলক’’ অভিহিত করে শনিবার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ভারতের সরকার ২০২০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে ঢুকে অন্তত ২০ জনকে হত্যা করেছে বলে জানানোর পর শুক্রবার রাজনাথ সিং ওই মন্তব্য করেছেন। গার্ডিয়ান বলেছে, বিদেশের মাটিতে বসবাসরত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারত ওই ব্যক্তিদের হত্যা করেছে।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘বিচারবহির্ভূতভাবে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে নির্বিচারে সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যা দিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে ভারতের দাবি অপরাধের পরিষ্কার স্বীকারোক্তি।’’
২০১৯ সালে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়ি বহরে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক হতাহতের পর ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। হামলায় পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মুহাম্মদের সদস্যরা জড়িত বলে শনাক্ত করার পর পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারত।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তান বলেছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে দুই ভারতীয় নাগরিককে হত্যার সাথে ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। ভারত বলেছে, এই অভিযোগ ‘‘মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক’’ প্রচারণা।
গত বছর কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানপন্থী নেতাদের হত্যা এবং হত্যার চেষ্টার সাথে ভারতীয় এজেন্ট ও সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ করেছিল দেশ দুটি। সেই অভিযোগ ঘিরে দেশ দুটির সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যাপক টানাপড়েন তৈরি হয়।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কানাডা জানায়, দেশটিতে ওই বছরের জুন মাসে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এক নেতার হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ‘‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের’’ তদন্ত করছে তারা। তখন ভারত কানাডার এই অভিযোগকে ‘‘অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’’ বলে দাবি করেছিল।
গত জানুয়ারিতে কানাডার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ভারত বিষয়টির তদন্তে সহযোগিতা করছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।
একইভাবে গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এক নেতাকে হত্যায় ভারতীয় চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে তারা। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগও এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলেছে, ওই ব্যক্তি শিখ নেতাকে হত্যার চেষ্টা চালানোর জন্য ভারতের সাথে কাজ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই বিষয়ে যে কোনও তথ্য পেলে তদন্ত করবে ভারত।