প্রায় ছয় মাসের অবিরাম সংঘাতের পর আসন্ন দুর্ভিক্ষের সতর্কতা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলকে গাজাবাসীর জন্য ‘জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও ভারী যুদ্ধ এবং অবিরাম বোমাবর্ষণে আবারও গাজা ভূ-খ- কেঁপে ওঠে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রায়ে বলেছেন, ‘ইসরায়েল অবিলম্বে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বিলম্ব না করে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’
বিচারকরা বলেছেন, এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাসস্থান, পোশাক, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন প্রয়োজনীয়তা, সেই সাথে গাজা জুড়ে ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা সরবরাহ এবং চিকিৎসা সেবা।
আদালত বলেছেন, ‘গাজার ফিলিস্তিনিরা শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে না, বরং দুর্ভিক্ষ শুরু হচ্ছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা গাজা ভূ-খন্ডের পরিস্থিতির আরও অবনতি বিবেচনায় সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের জন্য জানুয়ারিতে জারি করা আগের আদেশকে জোরদার করতে আদালতকে বলেছিল।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, দুর্ভিক্ষ ‘উত্তর গাজায় বাস্তবে পরিণত হওয়ার কাছাকাছি’ এবং গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ‘চলমান শত্রুতা এবং ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে’ ভেঙে পড়ছে।
যদিও ইসরায়ের যুদ্ধের ফলে ভূখ-ের বেশিরভাগ অংশকে বিধ্বস্ত মরুভূমিতে পরিণত করেছে। ইসরায়েল গাজার ২৪ লক্ষ মানুষের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। তবে শুধুমাত্র মাঝে মাঝে সাহায্য বিতরণের মাধ্যম সহজ কয়েছে। বিশুদ্ধ পানিরও অভাব থাকায় গাজাবাসীরা রাফাহ শহরের পশ্চিমে একটি ট্যাঙ্ক থেকে প্লাস্টিকের পাত্রে ভরতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল।
বাস্তুচ্যুত এক মহিলা মারাম আবু আমরা বলেছেন, ‘আমাদের সবকিছুর জন্য সারিবদ্ধ হতে হবে ‘আমরা মোট এক ঘন্টা হাঁটছি। মাঝে মাঝে, আমরা পানি ছাড়াই খালি হাতে ফিরে যাই।’
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার প্রধান দক্ষিণ শহর খান ইউনিসের আল-আমাল হাসপাতালের কাছে ভয়াবহ লড়াইয়ের খবর দিয়েছে। সেখানে তাদের সৈন্যরা কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং শত শত অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
ইসরায়েলী সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজা জুড়ে তারা আগের দিন কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। এই সময় ইসরায়েলী সেনারা হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও ৬২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, হামাস এবং জিহাদীরা গাজা হাসপাতালের অভ্যন্তরে থেকে লড়াই করেছে। রোগী, চিকিৎসা কর্মী এবং বাস্তুচ্যুত লোকদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তবে ফিলিস্তিনের হামাস গ্রুপ এসব অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েল বলেছে, আল-আমালের কাছে তাদের সৈন্যরা ‘হামাসের অবকাঠামোকে টার্গেট করে অভিযান চালিয়েছে এবং বিমানের সাহায্যে গুলি বর্ষণ করে ডজন ডজন হামাস যোদ্ধাকে নির্মূল করছে।’
ইসরায়েলী সেনাবাহিনী আরো বলেছে,তারা ‘বেশকিছু হামাস যোদ্ধাকে জজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।’
ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যানগুলোও খান ইউনিসের আরেকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নাসের হাসপাতালের আশপাশে ভিড় করেছে। কিন্তু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলেছে, তারা এখনও পূর্ণ মাত্রায় অভিযান চালায়নি।
গাজা সিটি জেলা আল-শিফা হাসপাতালের আশপাশেও তুমুল যুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী বলেছে,তারা গত সপ্তাহের শুরু থেকে প্রায় ২শ’ হামাসকে হত্যা করেছে।