প্রকাশ: সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪, ৬:৪৯ অপরাহ্ন
ভারতের গুজরাটে জন্মগ্রহণকারী ২৩ বছর বয়সী গণেশ বারাইয়া। বাকি পাঁচজনের থেকে আলাদা গণেশ, কারণ তাঁর উচ্চতা মাত্র তিন ফিট এবং ওজন মাত্র ১৮ কেজি। উচ্চতাই তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু সব বাধাই অতিক্রম করেছেন এই মেধাবী। এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কম উচ্চতার চিকিৎসক।
গুজরাটের ভাবনগরের গোরকি গ্রামের বাসিন্দা গণেশ বারাইয়া। তাঁর পরিবারে বারাইয়াই প্রথম, যিনি কলেজের গণ্ডি পার করেছেন। শারীরিক গড়ন আলাদা হওয়ায় তাঁকে ছোটবেলা থেকেই কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে।
খর্বকায় দেহের কারণে ৭২ শতাংশ অক্ষমতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গণেশের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তাঁর স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন মায়ের কাছে থেকে।
স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করলেও চার বছর বয়সে তাঁর মা-বাবা লক্ষ করেন, গণেশের মাথা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। ডাক্তাররা তাঁকে পরীক্ষা করে বলেছিলেন, তিনি এমন একটি রোগে ভুগছেন যার কোনো নিরাময় নেই। গণেশের বড় মাথা এবং ছোট শরীর নিয়ে স্কুলে উপহাস করা হতো। কিন্তু কিছু ছেলে ছিল যারা তার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল এবং সহানুভতি প্রকাশ করেছিল।
২০১৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। ভালো গ্রেড নিয়ে ব্যাচেলর অব মেডিসিন এবং ব্যাচেলর অব সার্জারি ডিগ্রির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার জন্য তা খারিজ করেছিল ভারতের মেডিক্যাল কাউন্সিল। হাল ছাড়তে নারাজ বারাইয়াও স্কুলের প্রিন্সিপাল ও ট্রাস্টির সাহায্য নিয়েই আইনি লড়াইয়ে নামেন।
মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ২০১৮ সালে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায় খারিজ করেন। ফলে বাধা কেটে যায় আর প্রথম সাফল্য পান তিনি। শীর্ষ আদালত বারাইয়াকে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির পক্ষে রায় দেন। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার আইনের কথা উল্লেখ করে গুজরাট সরকারকে তাঁকে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বর্তমানে গুজরাটের ভাবনগর শহরের স্যার টি হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গণেশ বলেন, ‘যখনই কোনো রোগী আমাকে দেখেন, প্রথমে একটু চমকে যান। তারপর অবশ্য তাঁরা আমাকে স্বাভাবিকভাবেই নেন।’ গণেশ এখন প্রতিদিনই মানুষের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। উচ্চতা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।