স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়াবেন, এটাই তো দস্তুর। তাদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। এক জনের বিপদের দিনে অপরজন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বিচ্ছেদের পর ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন স্বামী।
দিন দিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাঁধন যেন আলগা হচ্ছে। মতের অমিল থেকে ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আগে মনে করা হত ডিভোর্স একটা নির্দিষ্ট বয়সে হতে পারে, কিন্তু দিন দিন সেই ধারণার বদল ঘটছে। বিয়ের ৩০-৩৫ বছর পরেও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা উঠে আসছে।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর দাবি-দাওয়া তো আর এক কাহিনী। বিবাহ বিচ্ছেদ যে কতটা তিক্ততার দিকে গড়াতে পারে তা এ কাহিনি না জানলে বিশ্বাসই হবে না। বিচ্ছেদের আবেদনের পর স্ত্রীর কাছে কিডনি চেয়ে বসলেন স্বামী। এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
একসময় রিচার্ড বাতিস্তা নামে এক ব্যক্তি জীবন বাঁচাতে তার স্ত্রী ডোনেলেকে কিডনি দান করেছিলেন। তবে সুস্থ হওয়ার পর স্ত্রী তার কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন। রেগে গিয়ে স্বামী তার কিডনি ফেরত চেয়েছেন। শুধু তাই নয় স্বামীর দাবি, কিডনি ফেরত দিতে না পারলে ১৫ লাখ ডলার দিতে হবে।
১৯৯০ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন দম্পতি। তাঁদের তিন সন্তানও রয়েছে। পেশায় চিকিৎসক রিচার্ড বাতিস্তা। তার দাবি, বহু দিন ধরেই ভুগছেন তাঁর স্ত্রী। আর সে কারণে তাঁদের সম্পর্কে ঘুণ ধরেছিল বহু বছর আগেই। তবে সেসব কিছুকে আমল দিতে নারাজ ছিলেন বাসিস্তা। ভেবেছিলেন স্ত্রীকে সুস্থ করে আবার সম্পর্কটা আগের মতোই মজবুত হবে। ২০০১ সালে স্ত্রীকে কিডনি দানের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, 'আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল স্ত্রীর জীবন বাঁচানো।' সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচেন ডোনেল। তবে সম্পর্কের উন্নতি হয়নি। ২০০৫ সালে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। এরপরই রেগেমেগে বাতিস্তা স্ত্রীর কাছ থেকে কিডনি ফেরত চেয়েছেন। অন্যথায় কিডনির মূল্যের সমতুল্য ক্ষতিপূরণে দাবি জানিয়েছেন।
বাতিস্তার আইনজীবী জানান, তার মক্কেল কিডনির মূল্য জানতে চেয়েছিলেন। ডোনেলের থেকে তিনি সেটি ফেরত চান।
মেডিকেল এথিসিস্ট রবার্ট ভেচের মতে, 'এটি এখন ডোনেলের কিডনি। কিডনি বের করে নেওয়ার অর্থ তাকে ডায়ালাইসিস করতে হবে বা এটি তাকে হত্যা করবে।'
যদিও বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলাকালীন বাতিস্তার কিডনি বা ক্ষতিপূরণের কোনও দাবিই মঞ্জুর হয়নি। ১০ পাতার সিদ্ধান্তে তাঁর দাবি প্রত্যাখান করেছে শীর্ষ আদালত। আদালতের রায়, 'কিডনি দান উপহার স্বরূপ। তা ফেরত নেওয়া যায় না।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যখন কেউ একটি অঙ্গ দান করে তখন এটি আইনত একটি উপহার হিসাবে বিবেচিত হয়। অর্থের বিনিময়ে অঙ্গ বিক্রি ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডোনেলের অ্যাটর্নি ডগলাস আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, 'আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। মানুষের অঙ্গ এমন কোনও পণ্য নয় যা কেনা বা বিক্রি করা যায়।'