হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারের ফ্লাইটে আসা আফ্রিকান যাত্রী নাগরিককে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে ওই নারী যাত্রীকে আটক করে।
তবে সংশ্লিষ্ট দেশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা তল্লাশি ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এত বড় চালান এলো, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
জানা গেছে, গ্রেফতার নমথেনদাজো তাওয়েরা সোকোর (৩৫) বাড়ি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউইয়ে। ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। উত্তরার হোটেল অ্যাপোর্ড ইনে তার নামে রুম বুকিং করা ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিকান নারী জানান, ডন ফ্রানকি নামের নাইজেরীয় এক নাগরিক এবং বাংলাদেশি সাইফুল ইসলাম রনিসহ আরও কয়েকজন এই কোকেন পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তবে যাত্রী বাংলাদেশে কার কাছে এসেছিলেন, কে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এই অভিযান চালাই। তথ্য অনুযায়ী ইমিগ্রেশনের আগেই এই যাত্রীকে আটক করা হয় এবং তল্লাশি করে কোকেন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সন্ধানে রাতে আরও অভিযান চালানো হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকান এক নাগরিক কোকেনের চালান আনতে পারে, এমন গোপন তথ্য পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে বিমানবন্দরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি দল অভিযানের প্রস্তুতি নেয়।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ৮ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অভিযানিক দল কাতার এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে (কিউআর ৬৩৮) অভিযান চালায়। সেই ফ্লাইটে মালাউই নাগরিক নমথেনদাজো তাওয়েরাকে পাওয়া যায়। এ সময় তাকে চিহ্নিত করে নজরদারিতে রাখা হয়।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্ক এসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন তিনি। তবে তাকে ভিসা দেয়নি ইমিগ্রেশন পুলিশ। রাত ৮টার দিকে ভিসা না পাওয়ায় তাকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের দল। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে তার লাগেজে অবৈধ মাদকদ্রব্য কোকেন আছে। পরে লাগেজ বেল্টে নিয়ে কোকেন শনাক্ত করা হয়।
এই যাত্রীর বেগুনি রঙের লাগেজটি তল্লাশি করা হয়, লাগেজের সামনের ও পেছনের অংশে বিশেষভাবে তৈরি করা চেম্বারে লুকায়িত অবস্থায় স্কচটেপ মোড়ানো দুটি পলিথিনের প্যাকেট পাওয়া যায়। যেখানে ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য কোকো পাওয়া যায়। যার ওজন ৬৮০০ গ্রাম। এ ছাড়া ব্যাগে রক্ষিত কালো বর্ণের একটি বড় পোর্টফোলিওর উভয় কভারে বিশেষভাবে লুকায়িত স্কচটেপ দ্বারা মোড়ানো পলিথিন প্যাকেটে আরও কোকেন পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন মানের মুদ্রা, হোটেল রিজারভেশন ও ইনভাইটেশন লেটার উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। মামলায় নমথেনদাজো তাওয়েরাকে ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত মাদবদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর করবে বলে জানানো হয়।