নতুন বছরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা বেড়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকায় দেশটির নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ২৯৫ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীব্র ঠান্ডা বিরাজ করছে। একই অবস্থা ফিলিস্তিনেও। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এই শীতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সোমবার দক্ষিণ গাজা উপত্যকার শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমা হামলায় অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ১৯০ ফিলিস্তিনি। খবর আল জাজিরার
শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিমান এবং আর্টিলারি দিয়ে বোমাবর্ষণ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ওই এলাকায় বাস করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ৩৪০ জন। এছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে হামলায় গাজায় আহত হয়েছে ৬৩ হাজার। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।
এদিকে দক্ষিণ গাজার প্রধান শহরের দুটি হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এমনকি গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও এসব হাসপাতালে ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ডজন মৃত ও আহত ব্যক্তি আটকা পড়েছেন।
খবরে বলা হয়েছে, উদ্বাস্তু হয়ে তাঁবুতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবেও মারা যাচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ব্যথা উপশমের ওষুধ। শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। উপযুক্ত আবাসন এবং গরম কাপড়ের অভাবে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ তীব্র ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। জ্বালানি ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
হামাস ও ইসরাইল সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার শিশু অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। চলমান এ যুদ্ধের মাঝেই আবার জন্ম নিয়েছে অন্তত ২০ হাজার শিশু। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনার চিকিৎসা সেবা ও পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় শিশু মৃত্যুর হার দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে। শীতের দিনে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।
উপযুক্ত আবাসন এবং গরম কাপড়ের অভাবে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ তীব্র ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। খান ইউনিস হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শিশুরা যেসব রোগে ভুগছে তার বেশিরভাগই হল পেটের অসুখ। বিশুদ্ধ পানির অভাবের জন্য এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। ওরা পানিশূণ্যতায় ভুগছে। হাসপাতালে এখন সাধারণ সিরাপের মতো সহজ চিকিৎসাও নেই।
ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার বেশির ভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এ যুদ্ধ সেখানকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাদাগাদি করে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসব মানুষকে খাবার, পানি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন ‘নরকে বসবাস করছেন’।