গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছে কোকলা কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর কারখানাটির ভেতর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ২০-২৫ জন রক্তাক্ত হয়।
এ সময় শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার মৌচাক এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কোকলা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে কোকলা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড কারখানাটির শ্রমিকরা আজ সকালে কারখানার গেটের সামনে অবস্থান করে। এ সময় কারখানাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ভেতরে অবস্থান করা স্টাফ ও শ্রমিকরা বাইরে অবস্থান করা শ্রমিকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে বাইরে অবস্থান করা শ্রমিক ও ভেতরে অবস্থান করা শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি, ভেতর থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে ২০-২৫ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
কোকলা ফুড প্রডাক্ট কারখানাটির অপারেটর সাকিব হাসান রক্তাক্ত অবস্থায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজও বাসা থেকে বেরিয়ে কারখানাটির সামনে আসার পর দেখতে পাই শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমিও অংশগ্রহণ করি। এ সময় ভেতর থেকে ইট ছুড়ে মারলে আমার মাথা ফেটে যায়।’
কারখানাটিতে কর্মরত সাবিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। সরকার আমাদের জন্য যে বেতন নির্ধারণ করেছে আমরা সেটাই চাই; অতিরিক্ত কিছু চাই না। আমাদের ওপর কেন হামলা করা হবে।’
কারখানাটিতে কর্মরত রফিকুল হাসান বলেন, ‘সারা দিন পরিশ্রম করে মাস শেষে সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন পাই। এ টাকায় তো সংসার চলে না। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। মালিকপক্ষ সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন না করলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
শিল্পপুলিশ গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসে দেড় ঘণ্টা যাবৎ শ্রমিকদের বোঝাই। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি এই বলে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিকরা কোনো কথা না শুনেই কারখানাটি ভাঙচুরে চেষ্টা চালায় এবং মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।‘
কারখানাটির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আজকে যারা আন্দোলন করেছে তারা আমাদের শ্রমিক নয়। আমরা আগেই শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের বেতন ১৩০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকা করেছি। বাইরের শ্রমিকরা আক্রমণ করায় আমদের শ্রমিকরা পাল্টা জবাব দিয়েছে।