প্রকাশ: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম আরেক বন্ধুর বাবা অসুস্থ; শুনে মনটা খারাপ হলো। পরিকল্পনা করলাম দু'জনেই বন্ধুর বাবাকে দেখতে যাই। কিছু ফল কিনে দু'জনে রওয়ানা হলাম এবং বন্ধুর বাসায় পৌঁছলাম। কলিং বেল বাজাতেই বন্ধুটি এসে দরজা খুলে দিলো। সালাম দিয়ে ফলগুলো নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। শুনলাম চাচা অসুস্থ, কবে হয়েছে? এখন কেমন আছে? বন্ধুটি উত্তর দিলো আলহামদুলিল্লাহ আগে সবাই মিলে বাথরুমে নিতাম। এখন বসতে না পারার কারণে বিছানায়ই সবকিছু হয়। গতকাল ডাক্তার এসে বললেন, রোগী এখন তো তার স্যালাইন টানতে পারছে না। এরমধ্যে একজন বলে উঠলো তাহলে কি এখন ইন্নানিল্লাহ পড়তে হবে?
আমার এই গল্পের মতো অবস্থা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা বিভাগের।
এবার একটু খুলেই বলি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে স্বৈরাচারী সরকার বলা হয়। ঐ সরকার দলীয়করণ, ঘুষ, দুর্নীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। মেগা প্রকল্পের নাম ধরে কিছু করতে গেলেই অতি আগ্রহের সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতো। অনেক প্রকল্প রাস্তবায়নও হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ঘুষ-দুর্নীতি, ক্রয়-বিক্রয়ে যত ধরনের বাণিজ্য আছে সবকিছুই চলতো। এতে দেশের মানুষ উপকৃতও হয়েছে। তবে ঋণের কারণে উপকারের থেকে অপকারই বেশি হয়েছে। এসমস্ত টেন্ডারের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ কোন কিছুই জানতো না।
হাসপাতালগুলোতে ৬০ টাকার বালিশ লক্ষ টাকায় ও ১০ টাকার ডিম ১০০ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রকাশ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ না আসার কারণে এই সমস্ত দুর্নীতি করা সহজ হয়েছে। টেন্ডার ছাড়া দলের লোকজন কাজ না করেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে হয়তো জানেই না টেন্ডার হয়েছে বা রাস্তার কাজ চলছে। দেশে তখন কোনো আইনের শাসন ছিলো না।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা নামক শব্দটি বিগত সরকারের আমলে হিমাগারে বন্দি ছিলো। ডিএফপির সাবেক ডিজি এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী দুজন মিলে এসি রুমে বসে নিরীক্ষা করে ওয়েবসাইটে পত্র-পত্রিকার প্রচারসংখ্যা প্রকাশ করে দিতেন।
কোনো কোনো পত্রিকা সপ্তাহে একদিন-দু'দিন ৫০০ কপি বা তার কম ছেপেও প্রচারসংখ্যা দেখাতো দেড় লাখ কপি। এসব দেখার কেউ ছিলো না, বলারও কেউ ছিলো না। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অনেক আকাক্সক্ষা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলো। কিন্তু বৈষম্য কি দূর হয়েছে ? কিংবা দূর করার কাজ শুরু হয়েছে? অনেকেই হয়তো বলবেন, এজন্য সময় লাগবে, অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে। একথা আমিও অস্বীকার করবো না। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ বাক্য আছে সকাল দেখেই বুঝা যায়, দিনটি কেমন যাবে। না, নতুন সকাল দেখে কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছি না। বিশেষ করে ডিএফপির পত্রিকার প্রচারসংখ্যার নিরীক্ষার ফল নিয়ে। আগে ওয়েবসাইটে পত্র-পত্রিকার প্রচারসংখ্যা (যাই হোক সঠিক, কিংবা বেঠিক) প্রকাশ করা হতো। এখন আর প্রচারসংখ্যা ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। শুনছি, ডিএফপি ওয়েবসাইটে আর প্রচারসংখ্যা প্রচার করবে না। এতে এই বিভাগে প্রচারসংখ্যা নিয়ে আরো বেশি দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকে মনে করি, প্রতিটি খাতের দুর্নীতি রোধ করতে হলে সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। নয়তো ইন্না লিল্লাহি রাজিউন পড়তে হবে।