গতকাল মহান বিজয় দিবসে 'বাংলাদেশ টেলিভিশন' চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বিকাল ৫টায় প্রচারিত হয়েছে বিশেষ নাটক "জীবন বাজি"।
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক 'জীবন বাজি' নাটকটিতে নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিচালক নূর হোসেন রানা বলেন, "আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের অনেক নারী ও শিশু-কিশোরদের অনেক বড় অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথাই আমাদের চরিত্র গুলোর মাঝে নাটকটিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নাটক, সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রযোজক শাহজালাল সরদার শিমুল ভাইকে। তার উৎসাহে কাজটি সফলভাবে শেষ করা সহজ হয়েছে। এছাড়া এই কাজটিতে আমার পাশে ছিলেন- রিফাত আমিন, আলেয়া আলো, ইকবাল, আবুল হোসেন এবং ইমন খান। সবার অনেক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। তাই সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি সবার অভিনয়ে মুগ্ধ। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাজ পারফেক্ট মনে না হয়েছে, ততক্ষণ বিরক্ত না হয়ে ক্যামেরার সামনে সবাই কাজ করেছে। পুরো টিমটাই অসম্ভব পরিশ্রম করেছে। লেখক কাজী শাহনেওয়াজ এর মূল গল্পের একটি বিশেষ চরিত্রে আমিও অভিনয় করেছি।
অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমন খান, আলেয়া আলো, ইয়াসফা, রাইয়ান, প্রথমা, মোক্তার, আমির, জীবন, অনন্ত , আহনাফ, ফয়সাল, শাহিন, মিল্টনসহ অনেকে।"
নাটকটিতে প্রথমবারের মতো শহীদ শিশু মুক্তিযোদ্ধার বাবার চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেতা ইমন খানকে।
নিজের চরিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের গল্পে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইমন খান বলেন, "বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় কোন অর্জন আমাদের নেই। বিশ্বের বুকে নিজের করে পাওয়া জাতীয় সংগীত, পতাকা, মানচিত্রের ইতিহাস আমাদের এই যুদ্ধ। আমাদের কাছে সেরা মানুষ অবশ্যই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা । তাই এই প্রসঙ্গের গল্পে, চরিত্রে কাজের প্রস্তাব পেলে খুব আনন্দিত হই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক, সিনেমা, সংস্কৃতি কর্মকাণ্ড সবসময় আমার কাছে আলাদা ভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের গল্প ও আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংশ্লিষ্ট গল্পে কাজ করতে পারাটা আমার কাছে অনেক গৌরবের।
'বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী'র মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের গল্পে প্রথম কাজ করা হয় ২০০৮ সালে। 'জেনেসিস থিয়েটারে'র প্রশংসিত নাটক শেখ আকরাম আলীর লেখা এবং নূর হোসেন রানার নির্দেশনায় নাটক "সূর্যোদয়ের আগে"।
উল্লেখ্য, এই নাটকটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর প্রথম মঞ্চ নাটক, নাটকটি ১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ 'ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস' ময়দানে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। যা পরবর্তীতে ২০০৮ সালে 'জেনেসিস থিয়েটার' নাটকটি আবারো মঞ্চে নিয়ে আসে। 'বাংলাদেশ টেলিভিশনে' মুক্তিযুদ্ধের গল্পে প্রথম কাজ ২০১০ সালে বিজয় দিবসের বিশেষ নাটক "যুদ্ধে যাবো মা"।
নাটকটি পরবর্তীতে বিটিভির আর্কাইভ সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং ইউটিউবে ভূয়সি প্রশংসা অর্জন করে।
তিনি আরো বলেন, 'মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে' স্বাধীনতা দিবসে আমার প্রথম প্রশংসিত কাজ ছিল ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ টেলিফিল্ম আমান উল্লাহ নীরবের রচনা ও নির্দেশনায় "রসুলপুরের আনু"। কাজটি ওই সময়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে বেশ কয়েকবার প্রচারিত হয়। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রথম কাজ ২০২২ সালের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সাজ্জাদ হায়দারের "জাল ছেঁড়ার সময়"।
১৯৭১ সালের সত্য ঘটনার উপর নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি সেন্সর বোর্ড ও চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মাঝে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি চলচ্চিত্র 'হৃদয় ছোঁয়ার দিন'।"