
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৩.৬৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কর্তৃক সংকলিত ইউরোস্ট্যাটের তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের একই সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই রপ্তানি বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২.৭০ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, এই ইতিবাচক ধারার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে। এর মধ্যে মূল্য সংযোজিত পোশাক উৎপাদন বৃদ্ধি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, কারখানার নিরাপত্তা মান উন্নয়ন এবং প্রস্তুতকারক ও শ্রমিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য। তারা মনে করেন, এই কারণগুলো ক্রেতাদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যমতে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানিও বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই আমদানি ১৭.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালে ছিল ১৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার।
আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। এই বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটি ৪.৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৫.১২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্কের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। দেশটির রপ্তানি ৩.৬৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১.৬১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে ছিল ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এই সময়ে তুরস্ক ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সব প্রধান পোশাক সরবরাহকারী দেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিয়েতনাম ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে ৭৫৯ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬.৫৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ভারত, পাকিস্তান এবং কম্বোডিয়া যথাক্রমে ৮৬৫ মিলিয়ন, ৭১১ মিলিয়ন এবং ৭৭৫ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি যথাক্রমে ২৫.৬০ শতাংশ, ২৯.৬৫ শতাংশ এবং ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ-র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সামনের দিকে তাকালে পরিস্থিতি বেশ আশাব্যঞ্জক। ২০২৫ সাল জুড়ে কাজের অর্ডার বাড়বে এবং প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি যোগ করেন, ‘যেহেতু ক্রেতারা বাংলাদেশে তাদের সোর্সিং কার্যক্রম বাড়াচ্ছে, তাই এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।’
তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, এই তথ্য ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কৌশলগত অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। পরিমাণ ও মূল্য উভয় ক্ষেত্রেই রপ্তানির মাত্রা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে হবে এবং মুনাফার হার বাড়াতে হবে। রুবেল বলেন, ‘মূল্য সংযোজন এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলো আমাদের অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে মোট ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আয় হয়েছিল ১৯.৭৭ বিলিয়ন ডলার।