বাসকে এযাবৎ যাত্রীবান্ধব, সুশৃঙ্খল করার যত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার সবই প্রায় ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় বাস সব সময়ই যেন এক আক্ষেপের নাম। এমনই একটি ব্যর্থ উদ্যোগ ছিল ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চালু। ২০২১ সালে যা চালু হয় ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত।
পরিকল্পনায় ছিল- তিন বছরের মধ্যে এমন বাস চলবে ঢাকার সব রুটে। তবে বাস্তবতা হলো বিগত সরকারের উদাসীনতা আর বাস মালিক সমিতির অসহযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়ে সেই উদ্যোগ।
এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক গণমাধ্যমে বলেন, এই জায়গাগুলোয় রাজনৈতিক দৃঢ় প্রত্যয় লাগবে, যেটা মেয়ররা করতে পারতেন, কিন্তু তারা সেদিকে যাননি। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে চার শতাংশ সুদে চার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট বানিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এই প্রজেক্ট সফল হবে না যেনেও তারা এটা করেছিলেন।
বাস রুট রেশনালাইজেশনের প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, তৎকালীন যারা ছিলেন মালিক সমিতি বা এই প্রজেক্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সবার সদিচ্ছার অভাবেই সফল হয়নি এই প্রজেক্ট। আশার খবর হলো, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় আবার নড়েচড়ে বসেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। বাস্তবসম্মত করা হচ্ছে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পকে।
প্রথম পর্যায়ের ব্যর্থতার পর নতুন সরকারের সময় বাস রুট রেশনালাইজেশনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী ডিটিসিএ।
ধ্রুব আলম বলেন, আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছিলাম। তবে এখন আমরা ৪২টি রুটেই আবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বাস মালিকরাও এটায় সাড়া দিয়েছেন। ৪০টিরও বেশি কোম্পানি থেকে সহস্রাধিক বাসের আবেদন আমরা পেয়েছি। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ আমাদের পরিকল্পিত রুটে বাস চালাতে সক্ষম হব।
ঢাকায় ৩৪টি, শহরতলি পরিবহন নামে ঢাকার বাইরে আটটি রুটসহ মোট ৪২ রুটে চলবে বাস। এক রুটে একটি মাত্র কম্পানির বাস চলবে। ধ্রুব আলম বলেন, যেখানে-সেখানে কেউ ওঠা-নামা করতে পারবেন না। আমরা চেষ্টা করছি সবগুলো বাসে জিপিএস ট্র্যাকিং থাকবে। দেখা যায়, একই কম্পানির বাস নিজেরাই প্রতিযোগিতা করে, অন্য কম্পানি তো বাদই দিলাম। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা হবে না। পস মেশিন চলে এসেছে। আপনি ডিজিটালি টিকিট কাটবেন, কন্ডাক্টরকে টিকিট দেখিয়ে উঠবেন, গন্তব্যে পৌঁছে টিকিট দেখিয়ে নেমে যাবেন।
এ পদ্ধতিতে বাস পরিচালনায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি আলাদা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক। তিনি বলেন, সঠিক তত্ত্বাবধান না হলে একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারে এই উদ্যোগে। আগামী জুন মাস থেকে মেট্রো রেলের মতো র্যাপিড পাস দিয়েও ব্যবহার করা যাবে এসব বাস। পর্যায়ক্রমে বসানো হবে ক্যামেরা।