একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক, লেখক ও সাংবাদিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার গেন্ডারিয়ায় একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য ২০০৫ সালে আব্দুল গফুরকে একুশে পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। মৃত্যুকালে তিন ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা সদরের উপজেলা খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দদাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল গফুর। তার বাবার নাম হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সি। মা শুকুরুন্নেসা খাতুন।
১৯৪৫ সালে তিনি স্থানীয় মইজুদ্দিন হাই মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। তিনিসহ এ বিভাগে তখন মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী ছিলেন।
ভাষা আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন আব্দুল গফুর। এজন্য লেখাপড়ায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও ১৯৬২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আবদুল গফুর ছাত্রা অবস্থাতেই ১৯৪৭ সালে পাক্ষিক জিন্দেগীতে সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিশের বাংলা মুখপত্র, সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এই ভাষাসৈনিক। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক পিপল, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ পক্রিয়ার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তখন থেকে পত্রিকাটির ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুমের (ইসলামিক একাডেমি) সুপারিনটেনন্ডেট হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুব কল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবু জর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
আব্দুল গফুরের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ হলো ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম’, ‘বিপ্লবী উমর’, ‘কর্মবীর সোলায়মান’, ‘সমাজকল্যাণ পরিক্রমা’, ‘কোরআনী সমাজের রূপরেখা’, ‘খোদার রাজ্য’, ‘ইসলাম কি এ যুগে অচল’, ‘ইসলামের জীবন দৃষ্টি’, ‘রমজানের সাধনা’, ‘ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য’, ‘আসমান জমিনের মালিক’, ‘শাশ্বত নবী’, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম’, ‘বাংলাদেশ আমার স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতার গল্প শোনো’, ‘আমার কালের কথা’ (স্মৃতিচারণামূলক, ২০০০) উল্লেখযোগ্য।
আবদুল গফুরের ছেলে ক্রীড়া সাংবাদিক তারিক আল বান্না মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিকেল পৌনে ৩টার সময় গেন্ডারিয়া হাসপাতালে বাবার মৃত্যু হয়েছে। আজিমপুর গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।