মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 

চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে বিকৃত তথ্য ছড়াচ্ছে ভারত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়    অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার, বিচার নিশ্চিতের দাবি হাসনাত ও সারজিসের    চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ    একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমলো    ২০১ রানের বড় হার বাংলাদেশের    চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেড়শ ছাড়িয়েছে    অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল   
সোনালী লাইফকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে কুদ্দুস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪, ৫:০৪ অপরাহ্ন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। কুদ্দুস তাঁর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, জামাতাসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে কোম্পানিটির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ইতিমধ্যে গোলাম কুদ্দুস ও সোনালী লাইফে থাকা তার পরিবারের সদস্য পরিচালকদের গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

কোম্পানিটির ওপর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি এক বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

তথ্য মতে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বড় ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহানের স্ত্রী সাফিয়া সোবহান চৌধুরী, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকার স্বামী শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল, বড় মেয়ে কোম্পানির পরিচালক ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া এবং পরিচালক নূর এ হাফজার কাছ থেকে কোনো টাকা না নিয়েই ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার দেয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানির এফডিআরের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ঋন গ্রহণ করে ও সঞ্চয়ী হিসাব হতে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকাসহ মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এসব টাকা উত্তোলন করে একই ব্যাংকে কোম্পানির হিসাবে জমা করে আলোচিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসাবে দেখানো হয়।

এছাড়া সোনালী লাইফের এফডিআরের বিপরীতে স্যোস্যাল ইসলামি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক থেকে মোট ১৯৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৮১ হাজার ২ শত টাকা ঋন গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৮৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কোম্পানির বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কয়েকবার স্থানান্তরের পর গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে আত্নসাৎ করা হয়। আর প্রতি মাসে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ইতোমধ্যে কোম্পানিটির ক্ষতি হয়েছে ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে বের করে নেয়া অর্থের পরিমাণ মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা। এর মধ্যে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও জমি বা ভবন ক্রয়ের অগ্রিম দেখিয়ে অবৈধভাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ টাকা। সোয়েটার ক্রয়, আপ্যায়ন, ইআরপি মেইনটেনেন্স বাবদ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা। 

এছাড়া নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের মাসিক বেতন বাবদ নেয়া হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অবৈধভাবে বিলাসবহুল অডি কার ক্রয়ে খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা। বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ব্যয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮শ’ টাকা। গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে ড্যানিয়েলকে অবৈধ কমিশন দেয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

এতে আরো বলা হয়, ঋণ সমন্বয়, অনুদান, এসি ক্রয়, কোরবানির গরু ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, পলিসি নবায়ন উপহার, আইপিও খরচের নামে নেয়া হয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা। অফিস ভাড়ার নামে ড্রাগন আইটিকে প্রদান ১১ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা। সম্পূর্ণ ইম্পেরিয়েল ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা। ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স পরিশোধ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরীক্ষার পর গত এপ্রিলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফেরদৌসকে সোনালী লাইফের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি বিমা প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষার কাজ করছে। ২০২৩ সালে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগসহ ১৭ অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তারা।

স¤প্রতি লিখিত জবাবে গোলাম কুদ্দুস অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা গ্রহণ করার কথা স্বীকার করেন। 

তবে তিনি দাবি করেছেন, কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহার করা তরা ভবনের ভাড়াবাবদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাওনা ১১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ভাড়া প্রদানে বিলম্ব ফি বাবদ ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকাসহ তার মোট পাওনা ১৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। তবে তার এসব দাবির সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদন সহ অন্যান্য কোন ডকুমেন্টে মিল পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ৯ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা কোন ব্যাখ্যা দেননি কুদ্দুস।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ৬ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ পতন হয়েছে। গত ১২ আগস্ট বিমা খাতের এ কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিলো ৭২ টাকা ২০ পয়সা। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ২ দশমিক ৪২ শতাংশ পতনে সর্বশেষ দর ৬৪ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft