আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট বিক্ষোভ দমন করতে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে নাগরিকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকারকে সম্মান, আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়ন বন্ধ এবং অবিলম্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে।
ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বেআইনি বল প্রয়োগের 'প্রমাণ বিশ্লেষণ' সিরিজের দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘বাংলাদেশ থেকে পাওয়া সীমিত তথ্য দেশটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি বিভিন্ন ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক প্রমাণ যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির বিষয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রাণঘাতী এবং কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের অন্তত তিনটি ঘটনার ভিডিও যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং এর ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব। এগুলো হল- সাভার, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং রামপুরার ডিআইটি রোডের বিক্ষোভের ভিডিও।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডিপ্রোজ মুচেনা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে সামনে আসা ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক প্রমাণের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রমাগত যাচাই ও বিশ্লেষণে ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে। পাশাপাশি অতীতে বাংলাদেশ সরকার এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মানবাধিকার বিষয়ক ভয়াবহ রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে র্যাবও মোতায়েন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ও সক্রিয় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং যোগাযোগ বিধিনিষেধের কারণে আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার নিশ্চয়তা খুবই কম।
ডিপ্রোজ মুচেনা আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং সংস্থাগুলোকে মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকারকে সম্মান করতে, এই সহিংস দমন-পীড়ন বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে সমস্ত যোগাযোগ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আহ্বান জানাচ্ছে।
সমাবেশে পুলিশিং বা দায়িত্ব পালনের সময় আগ্নেয়াস্ত্র কোনও উপযুক্ত হাতিয়ার হতে পারে না উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের বিষয়ে আসন্ন হুমকি মোকাবিলার জন্য কঠোরভাবে প্রয়োজন হলেই, শুধুমাত্র এসব অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত।’
সংস্থাটির সিনিয়র ডিরেক্টর বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি সচল করতে হবে এবং বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, কারফিউ, বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর আদেশ এবং ইন্টারনেট বন্ধের মতো পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে না। এই দমনমূলক ব্যবস্থাগুলো এই বিক্ষোভ এবং ভবিষ্যতের যে কোনও ভিন্নমতকে চূর্ণ করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।’