কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও গতকাল সোমবার তা সহিংসতায় রূপ নেয়। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করলে বিশ্ব গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে।
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরপরই ‘সরকারি চাকরিতে কোটার প্রতিবাদে আহত অন্তত ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগপন্থী ও সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েক’শ কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষার্থী ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া লিপ্ত হয়েছে। তারা ঢিল ছোড়া, লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে একে-অন্যকে মারধর করেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিকে কোটা পদ্ধতির অবসানের দাবিতে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার সারা বাংলাদেশে ১০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
গত জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এবারই প্রথমবারের মতো বড় ধরনের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এ সময় তারা একে অন্যের ওপর ঢিল ছোড়া, লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে চড়াও হয়েছে।
বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারপরও দাবি আদায়ে সারাদেশে মিছিল ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পাঁচদিন আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। তারা বলছেন, বর্তমান কোটা ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক এবং তা সংস্কার করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি করছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু। বার্তা সংস্থাটি বলছে, সোমবার বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টিতে শত শত মানুষ আহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জড়ো হলে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি ইউনিটের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, ২৫০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চ্যানেল 24 এর বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দাবি করেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলায় তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।