টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সিলেটের ৬টি পয়েন্টের নদ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দু’টি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে থাকলেও আজ সকালে সিলেটে আরো ৪টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় আজ (মঙ্গলবার) সকালে জানায়, এ সময় পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে গত ২৪ ঘন্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আর ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে- ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি।
এর আগে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। তবে গতকাল ভোররাত থেকে সিলেটে ঝরতে শুরু করে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে নামতে থাকে উজানের ঢল। ফলে সোমবার সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়ে যায় পানিতে। যার ফলে আজ সকাল পর্যন্ত প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত। এর মধ্যে মহানগরের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী।
ঈদের দিন দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে নামতে শুরু করে মহানগরের পানি। তবে মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় সিলেটে বৃষ্টিপাত। ফলে আজ সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে সিলেট মহানগরের পানি। অনেক এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল থেকে আজ পরিস্থিতি আরও খারাপ। নতুন নতুন সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে ডুবছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর,মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত। এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।
বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন কুরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলটের সব উপজেলায় মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সোমাবার রাত পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।