প্রকাশ: বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ৭:২৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ৭:৩৮ অপরাহ্ন
ব্যাংক ঋণের স্মার্ট সুদহার তুলে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। বুধবার (৮ মে) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, শিগগিরই ব্যাংক ঋণের সুদহার সীমা তুলে নিয়ে বাজারভিত্তিক করা হবে। ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে ব্যাংক খাতে সুদহার ছিল ক্ষেত্র বিশেষে ২২ শতাংশ পর্যন্ত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে SMART (Six Months Moving Average Rate of Treasury Bill) এর সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে SMART ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের যোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা মানতে হবে।
(ক) ব্যাংকসমূহ ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম বা বেশি হারে ঋণ প্রদান করতে পারবে।
(খ) ঋণের মঞ্জুরিপরে উক্ত ঋণের সুদহার অপরিবর্তনশীল (Fixed rate) বা পরিবর্তনশীল (Variable rate) তা উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল হলে তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বৃদ্ধি করা হবে এবং উক্ত বৃদ্ধি কত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তা আবশ্যিকভাবে মঞ্জুরিপরে উল্লেখ থাকতে হবে।
(গ) কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ (Overdiac) হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, উক্ত সময়ে চলমান ঋণ/তলবী ঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণ স্থিতির ওপর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে।
(ঘ) ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ/আদায় করা যাবে না।
(ঙ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার কর্তৃক গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ/বিশেষ তহবিল/পুনঃঅর্থায়ন (প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ২৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে জারিকৃত বিআারপিডি সার্কুলার নম্বর-৪ এর নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মাসের ৭ তারিখের মধ্যে উক্ত মানের ঘোষিত সুদহার বিবরণী Web Portal এর মাধ্যমে Enterprise Data Warehouse (EDW)-এ আপলোড চলমান থাকবে। এ ছাড়া ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকসমূহ তাদের প্রদত্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে মুনাফার হার নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৬(২) (চ) ধারার বর্ণিত ক্ষমতাবলে জারি করা এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির সিদ্ধান্তের আলোকে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ‘স্মার্ট’ সুদহার চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মাসটিতে প্রথমবার জুন মাসের জন্য ‘স্মার্ট’ রেট ছিল ৭ দশমিক ১০। স্মার্ট রেট তুলে নেয়ার ফলে সুদহার নির্ধারণে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থানে চলে যাবে দেশের ব্যাংক খাত।
এদিকে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হলে সুদহার আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এপ্রিলে সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের মাস মার্চের স্মার্ট ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।