লিটন দাস। ভক্তরা তাকে ক্ল্যাসিক ব্যাটসম্যান হিসেবেই চেনেন। কিন্তু রান খরায় ভুগতে থাকা এই ক্রিকেটার কোথাও যেন স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। শিষ্য হিসেবে লিটনকে শুরু থেকেই চেনেন সুজন। সবকিছু ব্যাটে-বলে ঠিকমতো না হওয়ায় মানসিক পীড়নে ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সুজন বলেছেন, ‘ক্রিকেট মানসিকতার খেলা। লিটনের তো কৌশল পরিবর্তন হয়নি। হয়তো চিন্তা-ধারায় খানিকটা পরিবর্তন থাকতে পারে। মাঝে মাঝে রান না করলে অনেকটা চাপ থাকে, তখন যে বলটায় ও কাভার ড্রাইভে চার মারত, ঐ বলটায় পা চালাচ্ছে না। অনেক কিছুই হতে পারে।’
সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা বলে ব্যাট হাতে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছেন লিটন। লাল বলেও ছিলেন ব্যর্থ। এমন অবস্থায় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বেশ চাপেই আছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে চলছে বেশ সমালোচনা, এটাতেও চাপ আরো বাড়াচ্ছে। জাতীয় দলের পরে ডিপিএলের ব্যর্থতা তাকে ২২ গজ থেকে খানিকটা দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেওয়াটাই যেন যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন লিটন।
এই বিষয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘লিটনের মতো একটা খেলোয়াড় মনে করেন যে তার একটা বিরতি দরকার, তো আপনার অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে। তবে আমি মনে করি, ও খুব শক্তিশালী হয়েই ফিরে আসবে। খেলোয়াড়দের উত্থান-পতন থাকবেই, খারাপ সময় যাবে। শান্তর কথাই যদি বলি, খারাপ ছিল, ভালো হচ্ছে, আবার খারাপ হয়। এটা সব খেলোয়াড়েরই হয়, যদিও আমরা সবাই চাই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স হোক, তবে এটা অনেক সময় হয় না।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, লিটন সেইরকম ভালো খেলোয়াড় যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু আমি তাকে বলব তার ব্যাসিকের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে। আমার মনে হয় যে যেই লিটন ছোটোবেলা থেকেই যেইরকম ছিল, একটু সিনিয়র খেলোয়াড় হওয়ায় একটু রিজার্ভ টাইপের হয়ে গেছে। ঐগুলো থেকে বের হতে হবে। আচরণের কথাটা আমি বলব না, আমি বলব যে সবার সঙ্গে আরেকটু খোলামেলা মেশা, আরেকটু বেশি সময় দেওয়া ক্রিকেটকে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বিরতির বিষয়ে সুজন বলেছেন, ‘লিটন একটা বিরতি চেয়েছেন, আমিও মনে করি যে এটা তার দরকার। লিটন তো অবশ্যই বর্তমানে বাংলাদেশের সেরাদের মধ্যে একজন, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এটা আমি নিজেও স্বীকার করি। লিটনের ব্যাটিং আমি সবসময় পছন্দ করি। আমি মনে করি, মানসিকভাবে খানিকটা পিছিয়ে আছে, রান করেনি সেটা নিয়ে চাপ থাকে। যদি আমার ঐরকম সুযোগ না থাকতো তাহলে হয়তো লিটনকে আমি বিরতিটা দিতাম না। আমি লিটনকে বলেছি, একটা বিরতি নিয়ে চাপমুক্ত হয়ে আসুক। হয়তো ও আমার লিগের ম্যাচগুলোও খেলবে না, তবে সুপার লিগে ওকে আমি পাব।’
এ দিকে লিটনকে বিশ্রাম দেওয়ার অবশ্য সুযোগ ছিল কোচ সুজনের কাছে। কেননা গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল আবাহনী। চলতি মৌসুমেও টানা জয়ের ছন্দেই রয়েছে। জাতীয় দলের এক ঝাঁক তারকা খেলছেন দলটিতে। আর সবাই নিয়মিত পারফর্মও করছে। তাই দলে বেশি পরিবর্তন না এনে খানিকটা ছন্দ খরায় থাকা লিটনকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।
আবাহনীর এই কোচের মতে, ‘লিটন একটা দেশসেরা ব্যাটসম্যান, কিন্তু অবশ্যই ওর জন্য আমার ঐ পথটা খোলা আছে। আবাহনীতে ও অনেক বছর ধরে খেলছে, পারফর্ম করছে। যদিও সবশেষ দুই বছরে লিটনকে আমারা অনেক কম পেয়েছি। গত বছর ও খেলতেই পারেনি, এই বছর একটা ম্যাচ খেলেছে মাত্র।’ কেবল সুজন নয়, বাংলাদেশি ভক্তরাও মনেপ্রাণে চান লিটন ফিরে আসুক, পূর্বের মতো, একজন ক্ল্যাসিক ব্যাটসম্যান হিসেবে।