কাজহীন, বেতনবিহীন ও পাসপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করায় তিন বাংলাদেশিকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ।
এদিকে কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারী তিন বাংলাদেশি শ্রমিককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তুলেছে দেশটির মানবাধিকার সংগঠন পার্টি সোসিয়ালিস মালয়েশিয়া (পিএসএম)।
মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম নিউ স্ট্রেইটস টাইমস গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির মানবাধিকার সংগঠন পার্টি সোসিয়ালিস মালয়েশিয়া'র ব্যুরো প্রধান এম. শিবরঞ্জনী বলেছেন যে, বেকস কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি নামীয় এই নিয়োগকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা তো কোন ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদের কাজ দেয়নি, তাদের বেতন দেয়নি এবং তাদের পাসপোর্টও আটকে রেখেছে। তবুও আমাদের পুলিশ তাদের কোম্পানির মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারী তিন বাংলাদেশি শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। এবং তাদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে চার দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
দেশটির প্রভাবশালী এ অনলাইন পোর্টালটি আরো জানিয়েছে, ভিকটিম শ্রমিকরা বিশ্বাস করে যে, এগুলো মূলত তাদের ট্রাপে ফেলে বানোয়াট অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা, যা'তে বাকি শ্রমিকরা ভয়ে চুপ হয়ে যায়।
শিবরঞ্জনী আরো বলেছেন, যে তিনজন শ্রমিক তাদের নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট এবং শ্রম বিভাগে রিপোর্ট করেছেন। বিষয়টি শ্রম বিভাগ ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর কাছেও উপস্থাপিত হয়েছে।
দেশটির আরেকটি প্রভাবশালী অনলাইন ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে গতকাল জানিয়েছে, কোম্পানিটির মালিকের সহায়তায় অন্য আর একজন শ্রমিক তাদেরই কলিগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
পুরা এই ঘটনা মূলত সন্দেহজনক মোড়কে মোড়ানো মনে হচ্ছে বলে এমনই জানিয়েছে দেশটির জনপ্রিয় অনলাইন ফোকাস মালয়েশিয়াও। তাদের গতকালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় আনা ১৬০ জন শ্রমিকের মধ্যে এই তিন (৩) জনও ছিলেন এবং বেকস কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি নামীয় কোম্পানিটি তাদের কাজের জন্য প্রতিমাসে বেসিক ১৫০০ রিঙ্গিত বেতনের কথাও দিয়েছিলো। তবে তারা মালয়েশিয়ায় আসার পর থেকে কোনো কাজ বা বেতন পাননি এবং বর্তমানে তারা বেকার জীবনযাপন করছেন।
তাদের এখানে নিয়ে আসার পর দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (পিডব্লিউটিসি) এর পাশে অবস্থিত নং ২৮, জালান রহমাত, চৌকিটের এসআর হোস্টেল এন্ড রেসিডেন্স এসডিএন বিএইচডিতে রাখা হয়েছে।
দেশটির মানবাধিকার কর্মী শিবরঞ্জনী আরো বলেছেন, তাদের পাসপোর্ট তাদের কোম্পানি মালিক আটকে রেখেছে। কোম্পানি মালিক তাদের পাসপোর্ট ফেরত পেতে শ্রমিক ৬০০০ রিঙ্গিত দিতে হুমকি দিয়ে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, পিএসএম ৪ জানুয়ারি দেশটির সুবাং জয়া শ্রম বিভাগের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে সহায়তা করেছিল এবং ৩০ জানুয়ারি দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অভিযোগটি পৌঁছে দিয়েছিলো।
তারপর ৭ মার্চ, আমাদের একজন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল যে, বিভাগটি কোম্পানি মালিককে দুটি বিকল্প রাস্তার কথা বলে দিয়েছিলো। এক, তার শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠাতে বা তাদের জন্য নতুন কোনো কোম্পানিতে কাজের ব্যবস্থা করতে। এছাড়া, কোম্পানি মালিককে ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তার শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় আনার তারিখ থেকে তাদের মজুরি পরিশোধ করতে।
এদিকে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন পার্টি সোসিয়ালিস মালয়েশিয়া (পিএসএম) পুলিশকে অবিলম্বে আটককৃত তিনজন শ্রমিককে মুক্তি দিতে এবং ভিকটিম তিন শ্রমিকদের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া শিবরঞ্জনী দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রীকে আহবান জানিয়ে আরো বলেছেন, আমরা মানবসম্পদ মন্ত্রীকে দ্রুত সুষ্ঠ তদন্তের দাবি করছি এবং শ্রমিকদের তাদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের পাশাপাশি নতুন কাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।