দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল একটি চক্র। এর সঙ্গে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও মূল হোতাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে পাওয়া গেছে সেই চক্রের সন্ধান।
সহজ ডটকমের সার্ভার অপারেটর ও পিয়ন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত টিকিট আগাম বুক করে রাখতেন। ফলে ক্রেতারা সার্ভারে ঢুকলেও টিকিট পেতেন না। এভাবে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলতেন তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- সিন্ডিকেটের মূল হোতা মিজান ঢালী (৪৮), সোহেল ঢালী (৩০), সুমন (৩৯), জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), শাহজালাল হোসেন (৪২), রাসেল (২৪), জয়নাল আবেদীন (৪৬), সবুর হাওলাদার (৪০) ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)।
এসময় উদ্ধার করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকিট, আটটি মোবাইল ফোন, একটি এনআইডি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজির বিভিন্ন আলামত এবং টিকিট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা।
র্যাব বলছে, গ্রেফতার সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ নয়জন এই চক্রের সাথে জড়িত। তারাই সব টিকিট কালোবাজারি করতেন।
মিজান ঢালী ২০০৩ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। সবশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের দায়িত্ব সহজ ডটকমকে দেওয়া হলে সেখানেও গ্রেফতার মিজানের চাকরি বহাল থাকে। আর নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট হিসেবে সিএনএস বিডিতে যোগদান করে ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান। ২০২০ সালে সহজ ডটকমে চুক্তিবদ্ধ হলেও তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর গ্রেফতার নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিপ গ্রেফতার সবুর হাওলাদার এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।
আল মঈন বলেন, দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঢালী সিন্ডিকেটের মূল হোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিজান ঢালীর নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে মিজানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতেন।
র্যাব মুখপাত্র জানান, সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন বিধায় এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য দেয়া হতো। মিজান ও নিউটনের যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি হয়ে আসছিল।