প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:৪৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৫:৩৩ অপরাহ্ন
তুমুল নাটকীয়তার মাঝে পাকিস্তানের রাজনৈতিক তিনটি দলের প্রধানেরা পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তারা এই ঘোষণা দেন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ খবর বলা হয়েছে। ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তানের (আইপিপি) প্রধান জাহাঙ্গীর তারিন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্লামেন্টারিয়ানের (পিটিআই-পি) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পারভেজ খটক ও জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজুল হক দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর তারিন ও পারভেজ খটক শুধু দলীয় প্রধানের পদ থেকে নয়, রাজনীতি থেকেও বিদায় নিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর তারিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে যারা আমাকে সমর্থন করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং আমার প্রতিপক্ষকে আমার অভিনন্দন।’ তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে, তাই আমি আইপিপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি এবং রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি জানান, ‘আইপিপির সব সদস্যের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমি তাদের পরম মঙ্গল কামনা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমার দেশের সেবা করতে থাকব।’ ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান এবারের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে মাত্র দুটি আসনে জয় পেয়েছে, যার মধ্যে একটি আসনের ফল নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন জাহাঙ্গীর খান তারিন দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতিদের একজন।
২০১১ সালে তিনি পিটিআইতে যোগ দেন এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক হন। পিটিআইয়ের ২০১৮ সালের নির্বাচনী সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তারিনকে পিটিআই নেতা ইমরান খানের নিকটতম সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০২৩ সালে ইমরান খানের দল থেকে বেরিয়ে যান তিনি। পরে ওই বছরের জুনে নিজের রাজনৈতিক দল আইপিপি গঠন করেন তিনি।
এদিকে আরকে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর (জেআই) নেতা সিরাজুল হকও এক্স (সাবেক টুইটারে)-এ পোস্ট করে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এবারের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পায়নি দলটির প্রার্থীরা। তবে প্রাদেশিক পরিষদের পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে জামায়াত। খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশের লোয়ার দির আসন থেকে ভোটের লড়াইয়ে নেমে হেরেছেন সিরাজুল হক। তিনি লিখেছেন, ‘দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিচ্ছি এবং নির্বাচনে হারার দায় স্বীকার করে নিচ্ছি।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, নির্বাচনে হতাশাজনক ফলের কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এ ছাড়া পাকিস্তানের আরেক রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্লামেন্টারিয়ানসের (পিটিআই-পি) প্রধান পারভেজ খাত্তাকও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নির্বাচনী পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং তার দল শিগগিরই ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকবে।
এদিকে ভোটে প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় সরকার গঠনে অন্যান্য দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চাচ্ছে নওয়াজের দল। এরই মধ্যে পিপিপির সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছেন নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ। জাতীয় পরিষদে ১৭ আসন পাওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের সঙ্গেও পিএমএল-এনের প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে। এ ছাড়া পিটিআই সমর্থিত এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও নওয়াজের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ফলে তাদের সরকার গঠন করাটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।
পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের তিন দিন পর বেসরকারি ফলাফলে সবচেয়ে বেশি আসন ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে। তারা ২৬৪ আসনের মধ্যে সব মিলিয়ে পেয়েছেন ১০১টি আসন। এদের মধ্যে ৯৩ জনই ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী। নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ-এন জয় পেয়েছে ৭৫টি আসনে এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপলস পার্টি ৫৪টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অন্যরা পেয়েছে ৩৪টি আসন। সরকার গঠন করতে হলে ১৩৪টি আসন থাকতে হবে।
সূত্র : ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন