বেতনের দাবিতে টানা তিনদিন গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন টিএনজেড গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। এবার সরকারের সহায়তায় গ্রুপের পাঁচটি কারখানার তিন হাজার ৬২০ শ্রমিক এবং ১২০ জন স্টাফ বকেয়া এক মাসের বেতন পেয়েছেন। এতে খুশি শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে যথারীতি শনিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে কারখানাগুলো পুনরায় চালু হবে।
টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়তুল হক জানান, প্রথম দফায় শ্রমিকদের বকেয়া আট কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রমিকদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে এই বেতন পরিশোধ করা হয়। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বেতন পেয়ে কারখানার শ্রমিক রোকসানা আক্তার বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেতন পেয়ে গেছি। আমাদের মালিকপক্ষ কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। আমরা সবাই খুশি।
টিএনজেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়াতুল হক জানিয়েছেন, শনিবার থেকে কারখানাগুলো পুনরায় চালু হবে। তিনি আশা করছেন, শ্রমিকরা কাজে ফিরবেন এবং উৎপাদন শুরু করে মালিকপক্ষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করবেন। টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেসিক ক্লথিং লিমিটেড ও অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেডে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ শ্রমিকের অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া ছিল। এছাড়া এক্সপো কার্টুন ও এমএনএস ইয়ার্ণ ডায়িং কারখানায় স্টাফদের বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট বকেয়া রয়েছে।
এরপর ৯ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ভয়াবহ যানজট দেখা দেয় মহাসড়কে। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন এবং পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। টানা তিনদিনের বিক্ষোভের পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান ঘোষণা দেন যে, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে উদ্যোগ নেবে সরকার।
গত সোমবার রাতে শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে টিএনজেড গ্রুপের ৩১ শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, ১৭ নভেম্বরের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে।
টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়তুল হক বলেন, আমরা বড় বিনিয়োগ করেছি এবং ব্যাংকের সুদ পরিশোধে আমাদের অর্থ সংকট হয়েছে। এক্সপোর্ট বিপ্ল আপ ফান্ড থেকে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সহায়তায় নির্ধারিত সময়ের আগেই গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিকরা কোনো কাজ না করেই এই অর্থ পেয়েছেন। আগামী কিস্তির অর্থও তারা কাজ ছাড়াই পাবেন।
ব্যাংক লোন প্রাপ্তিতে জটিলতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছি। ব্যাংক ইন্টারেস্ট বাবদ দেড়শ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। ব্যাংক থেকে ৮ কোটি টাকার একটি লোন অনুমোদন করানো হলেও, টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে সমস্যা হয়। হেদায়তুল হক আরও বলেন, আমাদের এক্সপোর্ট বিপ্ল আপ ফান্ড থেকে ১১-১২ কোটি টাকা তুলে শ্রমিকদের বেতন দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আমাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করলে এই সংকট হতো না। কয়েকবার তারিখ দিলেও তা রক্ষা করতে পারিনি।
শ্রম সচিব শফিকুজ্জামানের সহায়তায় শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন, বিজিএমইএ’র রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, প্রায় শত কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তির দলিল নিয়ে সহযোগিতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু সচিব শফিকুজ্জামান ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেননি। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতায় শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকাগুলো সময় মতো পাবেন। আমরা আশা করি, শ্রমিকরাও এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারখানার উন্নয়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।