
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বকুলতলা বাজারে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও বানফোড় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতাব্দী পেরিয়ে চলা এই লোকাচার স্থানীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ব্রিটিশ আমল থেকেই ফতেপুরে চড়ক পূজার প্রচলন রয়েছে, যার বয়স প্রায় ৪০০ বছর। প্রথমদিকে জমিদার ও শিক্ষাবিদদের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত হতো এই পূজা।
পূজার আয়োজন নিয়ে আয়োজক কমিটির সভাপতি শ্রী সাধন কুমার ঘোষ জানান, “আমাদের পূর্বপুরুষদের দেখানো পথেই আমরা এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখছি। এবারও ৭ জন সন্ন্যাসী বরসি গাঁথিয়ে চড়ক গাছে ঘুরেছেন।”
চড়ক গাছে ঝুলে ঘূর্ণায়মান হয়েছেন বিপ্লব কর্মকার, সাধন রায়, ভীম হালদার, অধীর কুমার, বাসুদেব, অসিত কর্মকার এবং প্রবীণ সন্ন্যাসী মহাদেব হালদার ওরফে মনা কর্মকার।
সন্যাসী মনা কর্মকর জানান, “আমি তিন যুগের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছি। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, আমাদের সংস্কৃতির একটি অমূল্য নিদর্শন।”
গত ৮ বছর ধরে বানফোঁড়নে অংশ নেওয়া বিপ্লব কর্মকর জানান, বাপ দাদাদের ঐতিহ্য ও ধর্মীয়রীতি মেনে আমি এই বানফোঁড়নে অংশ নিয়ে থাকি। এছাড়া ১ মাস ধারে সাধনা করে পরিবার ছেড়ে ৭ দিন নির্জলা উপোস থাকার রীতি মেনেই আমি এই চড়ক পূজায় অংশগ্রহ করি।
প্রতিবছরের ন্যয় হাজারো দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চড়ক পূজা উপলক্ষে বিশাল মেলায় নানা ধরনের মিষ্টি ও বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
পূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ উদ্দিন মৃধা জানান, “পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার নান্টু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উৎসব সফল করতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে থাকা এই চড়ক পূজা আজও মানুষের ভক্তি ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে রয়ে গেছে।