
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী শহর সুমিতে রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিবস পাম সানডের দিন এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে কিয়েভ। হতাহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
এই হামলার মাত্র দুই দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক স্টিভ উইটকফের বৈঠক হয়েছিল।
সুমি শহরটি রাশিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে হামলা বাড়ছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘রাশিয়া শহরের কেন্দ্রভাগে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে—সেই সময় বহু মানুষ রাস্তায় ছিল। মানুষ রাস্তায়, গাড়িতে, গণপরিবহনে ও ঘরে—সব জায়গায় আহত হয়েছে।’
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় তারা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে ৮৪ জন, যাদের মধ্যে ১০টি শিশু।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র একটি সাধারণ শহরের রাস্তা, সাধারণ জীবন, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তায় থাকা গাড়িগুলোর ওপর আঘাত হেনেছে। এটা এমন এক দিনে ঘটেছে, যেদিন মানুষ গির্জায় যায়। শুধু নরপিশাচরাই এমন কিছু করতে পারে।’
জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘কথাবার্তা কখনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা থামায়নি।’ তিনি এই মন্তব্য করেন পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক উইটকফের সেন্ট পিটার্সবার্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলা আলোচনার দুই দিন পর।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হামলার পর শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা মরদেহ, দগ্ধ গাড়ি, আতঙ্কিত মানুষদের পালানোর দৃশ্য ও আহতদের ভূমিতে পড়ে থাকার ফুটেজ প্রকাশ করে।
এই হামলা এমন এক সময় হলো, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে মস্কোর তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন এবং ইউক্রেনে ‘পাগলের মতো বোমাবর্ষণ’ বন্ধের দাবি জানিয়ে রাশিয়াকে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি এপ্রিলের শুরুতে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় শহর ক্রিভি রিহতে রুশ হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৯টি শিশুও ছিল।
এদিকে সুমি অঞ্চল ক্রমাগত রুশ চাপের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেনের সেনারা সীমান্তবর্তী রুশ কুরস্ক অঞ্চল থেকে পিছু হটার পর থেকে। সুমি শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের মতো ভয়াবহ লড়াই থেকে মুক্ত ছিল। তবে কিয়েভ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সতর্ক করে আসছিল, রাশিয়া শিগগিরই সুমিতে বড় ধরনের অভিযান শুরু করতে পারে।
রাশিয়া সম্প্রতি প্রথমবারের মতো সুমি অঞ্চলের একটি গ্রাম দখলের দাবি করেছে, যা ২০২২ সালে আক্রমণ শুরুর পর এই প্রথম। রাশিয়া তাদের আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে সুমি অঞ্চল দিয়েই অভিযান চালিয়েছিল এবং কিছু এলাকা অল্প সময়ের জন্য দখলে রেখেছিল। তবে পরে ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়।
এ হামলা নিয়ে মস্কোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।