
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর তাকে বাঁচাতে চেষ্টার কোন কমতি ছিল না চিকিৎসকদের কিন্তু সবাইকে শোকে ভাসিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তার বাড়িতে মাতম চলছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও শিশু মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াত ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, হাসনাত-সারজিসসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সিএমএইচের চিকিৎসকরা ওই শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
দুপুরে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ও ছোট বোন বাড়িতে আছেন। মা ও বড় বোন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় আছেন। শিশুটির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর শিশুটির বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করছেন, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
শিশুটির চাচা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। এলাকার গোরস্থানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরেক আত্মীয় বলেন, ‘ওর বাবা নির্বাক হয়ে গেছে। সকাল থেকে কিছু খাননি। তাকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না। লোকজনের ভিড়ে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে ভিড় করা এলাকাবাসী ও স্বজনেরা বলছেন, দুপুরের পর তারা শিশুটি মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শিশুটির সঙ্গে এতটাই নির্মমতা হয়েছে যে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, এরপর আর চেতনা ফেরেনি। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
এর আগে বেলা একটার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালবেলা দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেয়ার পর তার হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ বেলা একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির বৃহস্পতিবার সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।
সিএমএইচ’র প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তাকে সিএমএইচের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
এর আগে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মাগুরার এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনা চলছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।
জানা যায়, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুটি মারা গেছে। এ নিয়ে শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাগুরার বিশিষ্টজনরা। সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন আসামিদের প্রকাশ্যে সর্ব্বোচ্চ শাস্তির।
শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে জেলায় শোকাতুর-শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এখনো শহরে কোনো বিক্ষোভ দেখা যায়নি।
তবে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরণের ঘটনা এটাই প্রথম। কোনোভাবেই এ ধর্ষণ-মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ধর্ষকদের পক্ষে কোনো আইনি সহায়তা দেয়া হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আইনজীবী সমিতি সব ধরণের সহায়তা করবে।
জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাবণী জামান বলেন, সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সবসময় শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হুসাইন বলেন, ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে শিশু ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন। এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে ছাত্র-যুব সমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
শিশুটির ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জেলা গণকমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, শিশুটির মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, একইসঙ্গে আমরা অবিলম্বে ধর্ষকের বিচার দাবিতে আন্দোলনে মাঠে থাকব।
শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন, শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (২৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার নথিতে বলা হয়, সজীবের সহায়তায় তার বাবা হিটু মিয়া শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন। বিষয়টি জাবেদা ও তার ছোট ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালান তারা।
মাগুরায় যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন। গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে। শিশুটির সুস্থতার জন্য সেনাবাহিনী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে।
সিএমএইচের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা পর্ষদ সর্বাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে শিশুটির জীবন রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াত ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, হাসনাত-সারজিসসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সিএমএইচের চিকিৎসকরা ওই শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
ড. ইউনূসের শোক: জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ
মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি মারা যাওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয় আইন মন্ত্রণালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল শোক জানিয়ে বলেছেন, মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে বিচারের কাজ শুরু হবে। শিশুটির ময়নাতদন্ত আজকেই করা হবে। ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। আজকেই মৃতদেহ হেলিকপ্টার যোগে নেয়া হবে। সাত দিনের মধ্যে বিচার শুরু হবে। দ্রুত বিচার শেষ হবে। আশা করি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। এ সময় নতুন আইনে শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কাজ করবে। আগামী রবি অথবা সোমবার আইনের কাজ শুরু হবে। সরকার কোনো কালক্ষেপণ করেনি। দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞেসবাদ করেছে। ধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলনের নামে কেউ ভিন্ন কিছু করতে চায় কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে।
মাগুরার শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে: আইজিপি
গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রেরিত এক বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মাগুরার সেই শিশুটি মারা গেছে। তাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলার তদন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালের পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মামলাটি তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে ‘নরপশুদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটির মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক শোক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের গণমাধ্যমে পাঠানো শোক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, মাগুরার কয়েকটা নরপশুর নিষ্ঠুরতা তার মতো এক শিশুর ওপর দিয়ে গিয়েছিল। ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় সংগ্রাম করে শিশুটি জগতের মায়া ছেড়ে আমাদের কতটা লজ্জা দিয়ে ও কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমি শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি এই ‘নরপশুদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শোক
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি এক শোকবার্তায় ওই শিশুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের আমিরের শোক
নিহত মাগুরার শিশুটির বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করে এবং ধর্ষকের বিচারের দাবি করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেন, শিশুটি ইতিহাসের করুণ সাক্ষী হয়ে আজ দুপুর ১টার দিকে দুনিয়া ছেড়ে সারা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে চলে গেল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে একান্ত প্রিয় হিসেবে কবুল করুন। জান্নাতে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা মেহেরবাণী করে দান করুন।
শিশুটির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করে তিনি আরও বলেন, মানুষ নামের যে পশুরা তাদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করতে গিয়ে মা’সুম শিশুটির জীবনের আলো নিভিয়ে দিলো, এ পশুদের কঠিনতম ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। সর্বোচ্চ ৯০ দিনের ভিতরে (৯০ কর্ম দিবস নয়) এদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, মানুষ নামের এ প্রজাতির পশুদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। ধর্ষকদেরকে ঘৃণা করি ও বয়কট করি।
পুরো বাংলাদেশ লজ্জিত: হাসনাত-সারজিস
ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মৃত্যুর সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে স্যোশাল মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তারা উভয়েই একই স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তারা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমাদের বোন আর নেই। তার ধর্ষণের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্ষকদের শাস্তির এক দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক। বিচারহীনতা, বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দীর্ঘসূত্রতা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে যে ধ্বংসাবশেষ জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, শিশুটির ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে সেই বিচার ব্যবস্থা আবার জেগে উঠুক। পুরো বাংলাদেশ বোনটির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, লজ্জিত।
শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মাগুরার আদালত।