
নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে আন্দোলনের সব অংশীজনদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী নেতারা।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক সমাবেশে নতুন এই দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে। যেখানে ১০ বা ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, যুগ্ম আহ্বায়ক, প্রধান সংগঠক ও মুখপাত্র পদ।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্র জানিয়েছে, অভ্যুত্থানে জড়িত সব মহলকে 'জায়গা' করে দিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব এবং দুটি মুখপাত্র পদের মতো নতুন পদ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।
নাগরিক কমিটির দুই নেতা জানান, গত বুধবারের বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কাঠামোসহ একাধিক প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
কেউ কেউ সুপার-টেন বা সুপার-টুয়েলভ স্টাইলের শীর্ষ কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করেছেন। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্র।
প্ল্যাটফর্ম দুটির সূত্র জানায়, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক পদ গ্রহণের বিষয়ে শুরু থেকেই সবার মধ্যে ঐকমত্য ছিল। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন।
তবে, সদস্যসচিবের দায়িত্ব কে নেবেন তা নিয়ে মূলত মতপার্থক্য।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পদ নিয়ে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
একটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রয়েছেন যারা আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্তত তিন জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এর আগে জানিয়েছিলেন, যারা বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা দ্বিতীয় ভাগে এবং তৃতীয় ভাগে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সদস্যরা রয়েছেন।
নতুন দলের সদস্যসচিব পদ নিয়ে ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিরোধ কমলেও এখনো তা পুরোপুরি কাটেনি।
শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আলী আহসান জুনায়েদ নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদ নিয়ে একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অস্বীকার করে ফেসবুকে বলেন, ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে কিছু বক্তব্য দেয়া হয়েছে 'যা সত্য নয়'।
নতুন দলের নেতৃত্ব গঠন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'বর্তমানে যেভাবে এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন হচ্ছে তা গণতান্ত্রিক এবং ইনক্লুসিভ হচ্ছে না।'
'এক্ষেত্রে কে কোন পদে আছে সে সংক্রান্ত আলোচনা অবান্তর। বরং যোগ্য যে কেউ যেন তার পছন্দের পদে যেতে পারে এবং এই যোগ্যতার পরিমাপক কী সেটা নিয়েই আমরা আলোচনা করে আসছি। এই সমস্যাটা সমাধান করাই এখন আমাদের প্রধান ও মূল লক্ষ্য,' লিখেছেন জুনায়েদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক কমিটির দুই নেতা বলেন, শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে কিছু 'মতপার্থক্য' রয়েছে।
নাগরিক কমিটির এক নেতা বলেন, 'কিছু সমস্যা থাকতে পারে, তবে এটি বিভক্তি নয়, বরং সুস্থ প্রতিযোগিতা। আশা করছি, দল ঘোষণার আগেই এসব বিষয় সমাধান হবে এবং যথাসময়েই ঘোষণার বিষয়ে আশাবাদী।'