
মুখের ভাষা আসে অন্তর থেকে। সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার করে শুধু নিজেকে না যিনি সামনে আছেন তাকেও সম্মান দেখানো হয়। গণমাধ্যমে ভাষার বিষয়ে আরো যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সমতায় তারুণ্য-ইয়ুথ ফর ইক্যুয়ালিটি প্রকল্পের অধীন ‘গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং অ্যাম্বাসি অফ দি কিংডম অফ নেদারল্যান্ডস, ঢাকা।
নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাইবার বুলিংয়ের শিকার অনেক নারী বেঁচে আছেন গভীর বেদনা নিয়ে। সাইবার বুলিং হচ্ছে, এটা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে, কিন্তু কীভাবে বুলি ঠেকানো যাবে তা নিয়ে আলোচনা খুব কম হচ্ছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আখতার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আখতার বলেন, পত্রিকাতে নারীর নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীর নাম পরিচয় গোপন রেখে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। অনেকের কাছে মনে হতে পারে সবকিছু ঠিক আছে, যথেষ্ট জেন্ডার সংবেদনশীল হয়েছে। কিন্তু যদি ভাষার বিষয়ে আসেন, তাহলে বলবো ভাষা কেবল শব্দতে নয়। ভাষা হচ্ছে একটা সোশ্যাল কনসট্রাকশন। আমি কেবল মেন-উইমেনের জায়গায় হিউম্যান দিবো, চেয়ারম্যানের জায়গায় চেয়ারপারসন লিখবো বা পত্রিকায় বেশি নারীদের ছবি দিলাম তাতে আমরা বিরাট পরিবর্তন বা সংবেদনশীল হয়ে গেলাম, এভাবে হয় না। যদিও এটা প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু ভাষাকে যদি আমরা বুঝতে চাই, ভাষার মাধ্যমে চিত্রায়ণ দেখতে চাই, তাহলে বিষয়টা অনেক গভীর।
তিনি বলেন, যেসব নারী সাংবাদিকরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে, তারা যতটা জেন্ডার সংবেদনশীলতা ধারণ করছে, পরিবেশটা তারা সেরকম পাচ্ছে না। সেই জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে প্রকাশ করছে মিডিয়ার মাধ্যমে। যখন ঢালাওভাবে আমরা গণমাধ্যমের কথা বলছি, তখন এই জায়গাগুলোকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে। সব ধরনের নারীদের ভয়েজ আমাদের উঠিয়ে আনতে হবে।
দেশে আইন অনুযায়ী প্রতিটি অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এন্টি হ্যারাসমেন্ট কমিটি থাকবে। তবে কর্মক্ষেত্রে এই কমিটি থাকলেও এর প্রভাব সেভাবে লক্ষণীয় নয়। বিভিন্ন বাঁধা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত। তাই কর্মক্ষেত্রে এই এন্টি হ্যারাসমেন্ট কমিটিকে জোরদার করতে হবে। যাতে এটা কার্যকর থাকে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পইেন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস নিশাত সুলতানা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা সাংবাদিকতায় যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয় সেগুলো আসলে বিচ্ছিন্ন কোনও বিষয় না। আমরা আসলে একেকটা সংস্কৃতিকে ধারণ করি। কাজেই সংবাদমাধ্যম হলেই যে আমি আলাদাভাবে লিখবো তা না। সেটা বিশ্বাসের জায়গা, আর এই বিশ্বাস একদিনে পরিবর্তন হবে না। তাই আমার মনে হচ্ছে, পরিবর্তনটা আসলে সব ক্ষেত্রেই দরকার। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা আছেন, তাদের শক্তির মাধ্যমেই আমরা সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছি।
তিনি বলেন, পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল স্পেসে নারীরা যে হয়রানির শিকার হচ্ছে, আমরা তার কোন শক্ত প্রতিবাদ দেখি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই জায়গায় কাজ করা দরকার। ডিজিটাল স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।
অ্যাম্বাসি অফ দা কিংডম অফ নেদারল্যান্ড ঢাকার সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার- জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মনে হচ্ছে আমরা সেই ৭০-এর সময়ে পড়ে আছি। এখনও তেমন আমরা আগাতে পারিনি। যতটুকু এগিয়েছে তা নিজের শক্তিতে এগিয়েছে। এখানে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র বা আইন সেভাবে ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়নি।
তিনি বলেন, এতো বছর ধরে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী ছিল, তারপরও কেনও নারীদের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি? দেশের অর্ধেকের বেশি নারী। আমাদের পিছিয়ে রেখে কী পুরুষরা এগিয়ে যেতে পারবে? আমরা যদি হাত না মিলাই তাহলে কী দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব? তাই আমাদের অধিকার ও প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আলোচনা সভাটির সঞ্চালনা করেন।
এছাড়া সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগী অধ্যাপক (অস্থায়ী) মনিরা শরমিন, ডেইলি স্টার পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম।