সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১ ফাল্গুন ১৪৩১
 

বিএম লক্ষিপুর ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপালের দূর্নীতি
দুর্নীতির প্রমাণসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি
খন্দকার হানিফ রাজা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:২৪ অপরাহ্ন

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের লক্ষিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আমির হোসেন তার গ্রামের ছেলে-মেয়েদের ভবিষতের কথা চিন্তা করে নিজের পৈত্রিক ভিটায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার কর্মকান্ড শুরু করেন। কিন্তু তার মৃতুর পর ২০০২ সালে তার সৎ চাচাতো ভাই সেলিম হায়দার চাচার পরিবারকে ধোঁকা দিয়ে বিএম লক্ষিপুর ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজ নামকরণ করে নিজেই এর প্রিন্সিপাল হয়ে দূর্নীতির আখড়া বানিয়ে নিজেই কোটিপতি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, প্রিন্সিপাল সেলিমের দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পোঁছালে গত ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনার তথ্য উল্লেখ করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে তদন্ত শুরু হলে এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেয়া হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু অবৈধ প্রিন্সিপাল সেলিম হায়দার মোটা অংকের টাকায় গিফট দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন গায়েব করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রিন্সিপাল পদটি নিজেই গ্রহণ করে জমির দলিলসহ অন্যান্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০১০ সালে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্তি করান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাজ থেকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাকুরি না দিয়েই টাকা আত্মসাৎ করেন। চাকুরি প্রত্যাশিরা টাকা চাইতে গেলে তাদের সেলিমের ভাই ইসলাম উদ্দিনকে দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।

অভিযোগে আরও জানা যায়, ওই কলেজে ঝ.ঝ.ঈ. এবং ঐ.ঝ.ঈ বোর্ড পরিক্ষাগুলো টাকার বিনিময়ে অন্যদের দিয়ে প্রক্সি পরিক্ষা দেয়া হয়। এতে সহযোগিতা করেন দপ্তরি সোহেল, ল্যাব এসিস্ট্যান্ট লাভলী ইয়াসমিন ও অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম। দুই হাজার টাকা দিলে পরীক্ষার্থীরা হলে নকল করার সুযোগ পায়। এমন কি টাকা দিয়ে ক্লাস করা ছাড়াই পাস করতে পারে। যার প্রমাণ হাজিরা খাতায় রয়েছে। ফর্ম ফিলাপ করার কথা বলে টাকা নিয়ে ফর্ম ফিলাপ করা হয়না। আর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন রকম রসিদও প্রদান করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। 

প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থী ভর্তির কাগজপত্র বোর্ডে জমা না দিয়ে ভুয়া এডমিট কার্ড, ভুয়া রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয়। পরে তারা কেন্দ্রে গেলেও পরীক্ষা দিতে পারেননি। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ২ বছর নষ্ট হয়ে  গেছে। পরবর্তীতে ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে মোটা অংকের টাকায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যা হাজিরা খাতা দেখলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এমনকি প্রবাসীরা বিদেশে থেকেও প্রিন্সিপালকে টাকা দিয়ে প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট কিনতে পারে বলে জানা যায়।

প্রিন্সিপাল সেলিম হায়দার কলেজকে ব্যবহার করে নিজেই ‘ইউনিক ডায়গনস্টিক সেন্টার’ ও ইস্টার্ন ব্যংকের এজেন্ট ব্যংকিং নিজের নামে নিয়েছেন। তার ভাইকে আকিজ কোম্পানির ডিলারশীপ দিয়েছেন। তার নামে-বেনামে অনেক জমি-সম্পত্তি কিনেছেন। তার ছোট ভাই-বোনদেরও নিজের টাকায় বাড়ি করে দিয়েছেন আর বিভিন্ন ব্যংকেও রয়েছে তার রয়েছে অঢেল টাকা।

তার আপন ভাবী সাদিকুন্নাহার এইচএসসি পাশ। কিন্তু সেলিমের সহায়তায় গ্রাজুয়েশনের ভ‚য়া সার্টিফিকেট জমা দিয়ে অবৈধভাবে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু কম্পিউটার সম্পর্কে তার ন্যূনতম জ্ঞানও নেই। কটিয়াদি বি এম কলেজের প্রিন্সিপালের স্ত্রী মিসেস ফাতেমা সুলতানা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে কলেজে না এসেও সরকারি বেতন-ভাতাসহ সকল সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এভাবে তিনি তার ভাই নুর ইসলামকে নাইট গার্ড ও নিজের ছোট বোন মনিকে ঝাড়ুদার হিসেবে দেখিয়ে বেতন দেন।

এদিকে, বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা কিশোরগঞ্জের ডিসি ও কুলিয়ারচর ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া তদন্তে অনেক দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যাচ্ছিলো। কিন্তু প্রিন্সিপাল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তদন্ত বন্ধ করে দেন এবং অভিযোগকারীদের সন্ত্রাসী দিয়ে অপমান-অপদস্ত, হামলা ও মারধর করা হয়। কলেজের সাবেক ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আশরাফুজ্জামান শাওন বিভিন্ন প্রমাণসহ কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিনে তদন্ত শেষে তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেয়া হয়। কিন্ত  সেলিম হায়দারের টাকার কাছে সেই তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা যায়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল সেলিম হায়দার বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যে সকল অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারও কোন সত্যতা নেই। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণপত্র জমা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে যায়নি ও যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই তদন্ত করেছেন তাকেও ম্যানেজ করেছেন। বোর্ডে তদন্ত প্রতিবেদন যায়নি। এমন প্রশ্নোত্তোরে তিনি বলেন এসব মিথ্যা অভিযোগ। তবে তিনি নিজের স্বজনদের এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft