মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 

২০১ রানের বড় হার বাংলাদেশের    চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেড়শ ছাড়িয়েছে    অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল    অবিলম্বে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি চাইলেন ফরহাদ মজহার    সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে : শীর্ষ নির্বাহীদের প্রধান উপদেষ্টা    সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিনন্দন ১০ মসজিদ    ধৈর্য্য ধরুন, উসকানিতে সাড়া দেবেন না: উপদেষ্টা আসিফ   
বিটিভিতে দুর্নীতি: সাবেক ডিজিসহ ফ্যাসিবাদি সরকারের সিন্ডিকেট সক্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:৩৪ অপরাহ্ন

বিটিভির সাবেক ডিজি-ডিডিজি-সাবেক জিএম-তৌহিদ-সেলিম-আতাউর-সাহরিয়ারসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এতে করে ভুয়া বিল-ভাউচারে শিল্পী সম্মানির আত্মসাৎ করা ১৩ কোটি২৮ লাখ টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি। সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তারের আত্মসাৎকৃত ২১ কোটি টাকা উদ্ধারে দুদকের সকল তদন্ত থেকে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানা যায়, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চ: দা:) মোছা: মাহফুজা আক্তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত রহস্যজনক কারণে থেমে যাওয়ায় শিল্পী সম্মানির ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে গায়েব করে দিয়েছে। একইসাথে নীতিমালা লংঘন করে ভুয়া কমিটির মাধ্যমে ১৭৬১ জন শিল্পীকে তালিকাভুক্তির জন্য কোটি-কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হয়েছে মর্মে অডিও ফাঁস হলেও তদন্ত কমিটি বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ডিডিজি ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও সাবেক পিএম (সঙ্গীত) মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ, যন্ত্রশিল্পী সুমন রেজা খানসহ প্রকৃত অপরাধীরা এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অপরদিকে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষ ২ মাসে অর্থাৎ মে-জুন ২০২৪ সালে অনুষ্ঠান না করেও  ভুয়া বিল/ভাউচারের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা লুটপাট করেছে সাবেক ডিজি ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম সিন্ডিকেট।

তদন্ত প্রতিবেদনে মাহফুজা আক্তার ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে শিল্পী সম্মানি কোডে ব্যয় সীমিত না রেখে ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনুমোদন ছাড়াই ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা লোপাট করেছেন মর্মে  প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা এবং ভুয়া তথ্য সরবরাহ করে এই বিশাল অর্থের কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন। তিনি আর্থিক বিধি-বিধান, আদেশ, অনুশাসন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই বিশাল অংকের দুর্নীতি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেদনে অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো: আতাউর রহমানের সক্রিয় সহযোগিতায় এ বিশাল অংকের শিল্পীদের টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন কররা হয়েছে মর্মে মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, বিটিভির দুর্নীতির এ তদন্তকালে শাস্তিস্বরূপ আতাউর রহমানকে গত ১৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বদলি করা হলেও মাহফুজা আক্তারকে তখন জিএম পদ থেকে না সরানোর কারণে তদন্তকালে কেন্দ্র প্রধান হিসেবে তিনি তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিথ্যা এবং ভুয়া তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে তদন্ত কমিটিকে চরমভাবে অসহযোগিতা করেছেন। তিনি ও আতাউর রহমান মিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন এবং অনেক ভুয়া বিল-ভাউচার সংযোজন করেছেন। তারপরও ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার কেলেঙ্কারি পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, অডিট চলাকালে এই সিন্ডিকেট ভয় ভীতি দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে অডিট টিমকে ম্যানেজ করেন। এর ফলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণিত ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার বিষয়টি অডিট টিম এড়িয়ে যান। এর আগেও মাহফুজা আক্তার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনকালেও ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচের নামে লুটপাট করেছেন মর্মে তৎকালীন মহাপরিচালক লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানিয়েছিলেন কিন্তু সে ব্যাপারেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, এরআগে মাহফুজা আক্তার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি, অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজিত রায় (সম্প্রতি তার মৃত্যু হয়েছেন)।

দুদক সূত্র জানায়, মাহফুজা আক্তার চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিজেই প্রযোজক সেজে ৬৩৯ টি অনুষ্ঠান নির্মাণ দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার ও নামে-বেনামে প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন। এমনকি মাহফুজা আক্তার ও নির্বাহী প্রযোজক সফির হোসাইন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমিনকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ৬০,৫৮,৩৪৬/- টাকার চেক নামে-বেনামে উত্তোলন করেছেন। কিন্তু সফির হোসাইন চট্টগ্রাম কেন্দের কর্মকর্তা না হয়েও সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তারের সাথে যোগ সাজেস করে ৭৩ লক্ষ টাকার বাজেট করে আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, ইতিপূর্বেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাহফুজা আক্তারে বিরুদ্ধে ঔধঢ়ধহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ ধমবহপু (ঔওঈঅ)-এর অর্থায়নে  ঐউঞঠ প্রকল্পের ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তদন্তের জন্য কয়েকবার মহাপরিচালককে পত্র প্রেরণ করেছেন কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। মাহফুজা আক্তার এই প্রকল্পের চউ থাকাকালীন তার স্বামী, বোন, কাজের মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে ৭ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা আত্মসাথের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখতে পায়নি। তিনি ঢাকার গুলশান নিকেতন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং রংপুরে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন।

সূত্র আরও জানায়, মাহফুজা আক্তারের স্বামী তার কানাডা প্রবাসী ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে টরেন্টোর বাংলা টাউনের ৮ নম্বর রোডে ৩ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন।

দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিটিভির সামনে বহু শিল্পী, কলা-কুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্প্রতি মানব বন্ধন করেছে। তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সিন্ডিকেটের অপরাধীরা ভোল পাল্টে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। তাই অচিরেই সিন্ডিকেট অপরাধীরাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার শিল্পী, কলা-কুশলী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মাহফুজা আক্তারের মোবাইল নম্বরে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি এবং এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft