দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা ও পরে দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বোর্ড, জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলতে সাকিব আল হাসান দেশে এলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে তার বিদায়কে রাঙিয়ে তোলার সব আয়োজনই করবে। তবে হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিরিজ শেষে তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার নিশ্চয়তার প্রক্রিয়ার অংশ হবে না বোর্ড।
বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ।
“আমি তো আসলে কোনো এজেন্সি নই, পুলিশ বা র্যাব। এটা আসলে আমার বা বিসিবির হাতে নেই। এটা আসলে পুরোপুরি সরকারি পর্যায় থেকে আসতে হবে, নিরাপত্তার ব্যপারটি। নিরাপত্তা দুই রকম, একটা হলো ক্লিয়ারেন্স পাওয়া, সে (সাকিব) যেরকম বলেছে। আরেকটি হলো, দর্শকদের ব্যাপারও আছে।”
“এই ব্যাপারে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এটার অংশ হতে পারব না। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। বোর্ড থেকে আমরা কী করতে পারি! একজন ব্যক্তি মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তো বোর্ডের নেই।”
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন কানপুরে সাকিব জানিয়ে দেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলে ফেলেছেন। আগামী মাসে দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে তিনি বিদায় জানাতে চান টেস্ট ক্রিকেটকেও।
তবে হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে আছে নানারকম অনিশ্চয়তা ও জটিলতা। সেই শঙ্কা থেকেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার অবসরের ঘোষণার পর বলেছেন, “আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন।”
সাকিব বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলেও ফারুক আহমেদ পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তাদের এখানে কিছু করার নেই। নিজের এই অবস্থান সাকিবকে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও দাবি বোর্ড প্রধানের।
“(সাকিবের সঙ্গে) কথা হয়েছে যে, ওই পর্যায় থেকে (সরকারি) তার মামলার ব্যাপারে কী হবে না হবে। আমরা বলেছি যে, বোর্ড থেকে আমাদের কিছু করার নেই। তবে পুরোপুরি ওই জিনিসটা আমাদের আছে যে, সে যদি এখানে শেষ টেস্ট খেলতে পারে, তাহলে তো খুবই ভালো হবে। এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না।”
“বাকিটা ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, ক্লিয়ারেন্সটা কে দেবে? বোর্ড থেকে আমরা তো দিতে পারব না। এটা অবশ্যই একদম উচ্চ পর্যায় থেকে আসতে হবে।”
দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত মাসে সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৫৬ জন আসামির মধ্যে ২৮ নম্বরে আছে তার নাম।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বা সরকারি পর্যায়ে কারও সঙ্গে সাকিবের এই ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি।
“আমরা কিছু বলিনি কাউকে। এটা যেহেতু বিচারাধীন ব্যাপার, এই ব্যাপারে আমাদের খুব একটা কিছু করার নেই।”
শেষ পর্যন্ত সাকিব যদি দেশে না ফেরেন, তাহলে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টই হবে তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। কোনো কারণে কানপুরে না খেললে শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন তিনি চেন্নাইয়েই।
সাকিব দেশে না ফিরলে বিসিবির পদক্ষেপ কী হবে, সেই ভাবনায় এখনই যেতে পান না ফারুক।
“এই মুহূর্তে ভাবার কিছু নেই। সে আসতে চেয়েছে, শেষ টেস্ট খেলতে চায় এখানে। (যদি আসতে না পারে) ওই পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়, তখন আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করব। এত আগে চিন্তা করতে চাই না।”
অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই সাকিব কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানালেন ফারুক। এই অলরাউন্ডারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা বিসিবি সভাপতি করেননি।
“আসলে সাকিব তার জীবনের কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সব দিক থেকেই। আমার খুব বেশি কিছু বলার ছিল না তাকে। তাকে বোঝানোর চেষ্টাও করিনি।”
“সে যে কারণটা দেখিয়েছে একটা খেলোয়াড় যখন বুঝতে পারে যে, সময় হয়ে গেছে এত বছর যা করে এসেছে (তা আর হচ্ছে না)। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সে অন্যদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ করে দিতে চায়, ২০২৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। টেস্টের ব্যাপারে সে খেলতে চেয়েছিল, ঢাকা থেকে অবসর নিতে চায়। আমি এটাকে সম্মান জানিয়েছি।”