গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মো. নাহিদ ইসলাম, অতিরিক্ত অর্থ সচিব জনাব মো. নজবুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) এর মহাপরিচালক, সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মহোদয়, আসসালামু আলাইকুম। আমি প্রথমে ছাত্র-জনতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধন্যবাদ জানাই এবং যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যে-সকল ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধদপ্তরের মহাপরিচালককে। আমার জানা মতে, এই প্রথম সকল পত্র-পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে কিছু অনিয়মের কথা না-বললেই নয়। বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের বিমানবন্দরে যে-সকল অনিয়ম হয়েছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে দূর করা সম্ভব হয়েছে। একইভাবে সংবাদপত্রের সমস্ত অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পত্রিকার বিভিন্ন বৈষম্যও দূর করতে হবে। প্রচারসংখ্যার দিক দিয়ে যেসব-পত্রিকা যে-অবস্থানে আছে, সেই পত্রিকাকে সেই অবস্থানই দিতে হবে। ৬০০০ পত্রিকা না-ছাপালে মিডিয়া হয় না। প্রয়োজনে এই নিয়মের পরিবর্তন করে ২০০০ ছাপা হয়, এমন পত্রিকার মিডিয়া হোক। গণতান্ত্রিক দেশে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব।
মিডিয়াভুক্ত পত্রিকা দুই হাজার করাও সম্ভব। যেসকল জাতীয় পত্রিকা ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়, সেই সকল পত্রিকা যদি কমপক্ষে দেশের ৫০ জেলায় না যায়, তাহলে সেই-সকল পত্রিকার ব্যাপারে কী করা উচিত? অনেক পত্রিকা আছে, বিজ্ঞাপন পেলে ছাপে। অনেক পত্রিকা আছে, সপ্তাহে ৫ দিন ছাপে। আবার অনেক পত্রিকা আছে ২০০ কপি ছাপে। এই ধরনের অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন ডিএফপিতে ১ লক্ষ-দেড় লক্ষ দেখানো হয়েছে। এই সমস্ত পত্রিকার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যাবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয় বলেও অভিযোগ আছে।
সচিবালয়ে ঢোকার জন্য সাংবাদিক ছাড়াও অনেকের কাছে কার্ড ভাড়া দেয়। অনেকে ব্যবসার তদবির করার জন্য কার্ড ভাড়া নেয়। এই সকল বিষয়ে নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। শুধু ডিএফপি'র লোক দিয়ে নিরীক্ষা না করিয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্রের প্রচার বিভাগের ৬ টা সংগঠন; যথা- ১/ সার্কুলেশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন, ২/ সংবাদপত্র হকার্স সমিতি, ৩/ সংবাদপত্র এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ৪/ সংবাদপত্র পরিবহন মালিক সমিতি, ৫/ সংবাদপত্র ও পত্র-পত্রিকা বিপননী কেন্দ্র এবং ৬/ সংবাদপত্র হকার্স কল্যাণ সমিতির ১ জন বা ২ জন করে নিরীক্ষার জন্য মনোনীত করলে ভালো হয়। কারণ এরা সবাই পত্রিকা প্রচারের সাথে জড়িত। এই নিরীক্ষা সঠিকভাবে করতে পারলে দেশের লক্ষ-কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বিগত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি মনে করি, সকল বিজ্ঞাপন আগের মতো সেন্ট্রালি বিতরণ করলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে। বর্তমানে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, মন্ত্রণালয় ও কোর্ট-কাছারি সকল জায়গায় ৫০% থেকে ৮০% কমিশন দিয়ে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করতে হয়। কিছুৃ সংখ্যক মিডিয়াভুক্ত পত্রিকা আছে, যে-সকল পত্রিকা বিজ্ঞাপন পেলে ৫০ কপি- ১০০ কপি ছাপে। সেই সকল পত্রিকা যদি ৫০০০ টাকা পায়, তা-ই তাদের লাভ। কারণ তাদের অফিসে নেই কোনো স্টাফ। তাদের বলা হয় ব্রিফকেস পত্রিকা। সচিবালয়ে তাদেরকে বিভিন্ন কাজের তদবিরে দেখা যায়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ২০২৪ সালে এসে সহস্রাধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে সোনার বাংলা গড়তে চাই। এই দেশে থাকবে-না কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি। এখানে মুখ্যভূমিকা পালন করবে সংবাদপত্র। সংবাদত্রের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার থাকতে হবে। সংবাদপত্র সমাজের আয়না। সে আয়নাকে যদি কালো কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়; তাহলে দেশ কখনোই দুর্নীতিমুক্ত হবে না। শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি যদি বন্ধ না-হয়, তবে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না।