বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে সুইজারল্যাল্ড সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের যেকোনো উদ্যোগকে তারা (সুইজারল্যান্ড) স্বাগত জানাবে ও সহযোগিতা করবে। আমাদের এই টাকাগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের এত টাকা পাচার হয়েছে, লুণ্ঠন হয়েছে, বাইরে গেছে—এগুলোকে যদি ফিরিয়ে না আনতে পারি, তাহলে অর্থনীতিকে রিকবারি (পুনরুদ্ধার) করা কঠিন হবে।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলির সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমীর খসরু।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সুইস রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন দেখা করতে এবং বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন রোডম্যাপ, বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে—এসব নিয়ে আলোচনা করতে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে সেবিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে বিএনপির চিন্তাভাবনা কী আছে, তা জানতে চেয়েছেন। মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামো যে ভেঙে গেছে, এখান থেকে বের হওয়ার কী পথ? আমরা কী চিন্তা করছি, আর ওরা (সুইজারল্যান্ড) কী চিন্তা করছে, এই বিষয়গুলো জানাই তাদের উদ্দেশ্য।’
বিএনপিনেতা আমির খসরু বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠাগুলো দেশ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়; সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কিংবা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এগুলো যে একেবারে ভেঙে গেছে, খারাপ অবস্থায় আছে, এগুলোকে কীভাবে সংস্কার করা যেতে পারে, এ নিয়ে সেখানে আমরা আলোচনা করেছি। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান—আর্থিক খাত, রাজনৈতিক খাত, নির্বাচনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলো কীভাবে রিকবারি করা যায়, সেক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি কী? কীভাবে কার্যকর অবস্থানে নিয়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে তারা তাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এগুলোকে কেপাসিটি বিল্ডিং করার জন্য সহযোগিতার কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূত।’
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “সময় নিয়ে আলোচনা ওইটাই যে, একটা যৌক্তিক সময়। ‘বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ’—এই কথাটা আমরা গত ১৬-১৭ বছর ধরে বলেছি বারবার। দেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে, অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে, সে জায়গায় তো দ্বিমত থাকার কোনো সুযোগ নেই।”
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘আমরা বিগত সরকারকে বারবার বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজগুলো করবে। তাদেরকে আমরা নির্দিষ্ট করে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেইনি, কিন্তু যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তো জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেটার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হলে যত তাড়াতাড়ি একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা সম্ভব। সেটা সবাই প্রত্যাশা করে। আমি নিশ্চিত, আজকের অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তারাও এই কথা বিশ্বাস করে। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি, সহযোগিতা দিয়ে যাব। অন্যথায়, এই কাজগুলো করা সম্ভব হবে না। একটা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে জনগণ, সেই প্রত্যাশা পূরণে সবাইকে কাজ করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি, করে যাব।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরকার, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে তারা সহযোহিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে আমরা বারবার বলেছি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের আজকে অর্থনৈতিক রিজার্ভ কোথায় দাঁড়িয়েছে, আমরা সবাই জানি। একটা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ পার হচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) এত টাকা পাচার করেছে যে বাংলাদেশের রিজার্ভ একেবারে তলানিতে চলে এসেছে। প্রতিটি নাগরিক এটার প্রভাব অনুভব করতেছে। সেক্ষেত্রে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অবস্থান আগের মতোই আছে। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের যেকোনো উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানাবে এবং সহযোগিতা করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘যখন একটি সরকারের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তারা কাজটি করতে পারে। কিন্তু, যারা টাকা পাচার করেছে তারা তো ফিরিয়ে আনার কাজটি করবে না। তবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন যে সরকার ঘটাতে চায়, তাদের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে যে টাকাটা যে জায়গায় তারা নিয়ে গেছে, সেই সরকারের সঙ্গে কাজটা শুরু করতে হবে। সুইজারল্যান্ড সরকার কিন্তু আগেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল কিন্তু যারা টাকা পাচার করেছে তাদের প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ নেই, কারণ তারাই টাকা পাচার করেছে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে এবং আগামী দিনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদেরকে এই উদ্যোগটা গ্রহণ করতে হবে দেশ ও জনগণের স্বার্থে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তার সঠিক জায়গা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে অবশ্যই এই কাজ কাজটা আমাদের করতে হবে।’