দিনাজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৪ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় অজ্ঞাত আরও ৭০ থেকে ৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক ছাত্রের করা ওই মামলায় বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যার পর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলী ৫ আগস্ট তার বাসায় হামলার অভিযোগে থানায় মামলা করতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা তাকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
এ সময় তিনি ছাত্রজনতার চাপের মুখে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (৫৫), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলী (৬১), পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসার (৪৫), তার পিএ মো. আব্দুল বাশার (৩৭), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুস সবুর (৬০), উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইশান ইসলাম (৩৩), কলেজ পাড়ার মো. শাহ জাহান (৩৫), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. বাপ্পী সরকার (৩২), শহিদপাড়ার মো. সিমন ইসলাম (৩০), ছাত্রলীগ নেতা মো. নাসিরুল ইসলাম নয়ন, শহিদপাড়ার মো. নিলয় ইসলাম (২২), মো. মেহেদী হোসেন (২২), হাজিপাড়ার মো. রিয়াদ হোসেন (২২), আটগাঁও পশ্চিমপাড়ার মো. নাঈম ইসলাম (২৪), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. শাহ নেওয়াজ সৌরভ (২৮), শহিদপাড়ার মো. আশরাফুল ইসলাম আকাশ, আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছুটি (৬০), সেতাবগঞ্জ কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শাওন ইসলাম (২৮), ছাত্রলীগ নেতা মো. হৃত্তিক হোসেন (২৪), মো. সমুদ্র ইসলাম (২৮), বড়মাঠ পাড়ার মো. সোহেল রানা (৪০), উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ আলী তুহিন (৩৯), রেলকলোনী পাড়ার মো. আরাফাত হোসেন জনি (২৮) ও বোচাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন (৩৮)।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে মামলার বাদী রেলকোলনী পাড়া মহল্লার মো. ফজল আলীর ছেলে ছাত্র মো. ফয়সাল মোস্তাক মামলায় উল্লেখ করেছেন, ১৮ জুলাই দুপুর ১২টা ২০মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি সেতাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে পৌঁছালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফসার আলীর নির্দেশে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইট পাটকেল, লোহার রড নিয়ে মিছিলে হামলা করে মারপিটসহ ছাত্রীদের শ্লিলতাহানী ঘটায়। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাণ রক্ষার জন্য আত্মগোপণে থাকায় চিকিৎসাও করাতে পারেননি।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. ফয়সাল মোস্তাক বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলী শুক্রবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করার জন্য বোচাগঞ্জ থানায় যান। খবর পেয়ে ছাত্রজনতা তাকে থানার ভেতরে ঘিরে ফেলে। এ সময় ছাত্রজনতা তাকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি উপস্থিত জনতার সামনে মাইকে ঘোষণা দেন যে তিনি পদত্যাগ করবেন। পরে সেনাবাহীনির গাড়ি গেলে তাকে সেনাবাহীনির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক উপজেলা চেয়ারম্যানকে ছাত্রদের মিছিলে হামলা করার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।