অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কেউ যদি ধানমন্ডিতে ফুল দিতে চায় তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাধা দিতে পারে না। যারা সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ পুলিশের মাধ্যমে হেজাফতে ইসলামের সমাবেশের সময় কান ধরে ওঠবস করানোর সংস্কৃতি শুরু করেছিল। তবে তা কোনোভাবেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সারজিস বলেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলার অধিকার কারো নেই। তাই এসবের সাথে সমন্বয়ক বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে বহিষ্কার এবং ব্যবস্থা নেও হবে।
এ সময় কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক অভিযোগ তুলে বলেন, ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ছদ্মবেশে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো কর্তৃপক্ষ নয়, বরং একটি প্রেসার গ্রুপ।’
সারজিস আলম বলেন, ভাইরাল ভিডিওতে দেখেছি যে ‘আমার বাবার বয়সী একজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে, আমার বাবার বয়সী একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে ও লোকজন যাচ্ছেতাই বলেছে, অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে, আমার মায়ের বয়সী একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে এবং সাংবাদিক ভাইবোনদের ওপর হামলার বিভিন্ন ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এমন অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। গত ১৬ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, কথা বলার অধিকার হরণ, দুর্নীতি-নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে—এগুলোর বিরুদ্ধেই ছিল আমাদের অভ্যুত্থান। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি, যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, মতপ্রকাশ করতে পারবে, যে যে ধারায় বিশ্বাসী, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে- এই স্বাধীনতাগুলো থাকবে। গতকাল আমরা এমন বেশ কিছু চিত্র দেখেছি, যে জায়গাগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল। আমরা জানি না, ওই শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ ধারণ করে, তাদের ডিফাইনও করতে পারব না।’
গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের সবাই একসাথে বসে আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলছি, আমরা খুঁজছি যে এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক যুক্ত আছেন কি না। আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুরো বাংলাদেশে এসব ঘটনার সাথে একজন সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের যুক্ততা পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের টিম থেকে বহিষ্কার করব। মানুষকে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এগুলো কোনোভাবেই আইনসংগত নয়। আমাদের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা করা প্রয়োজন, একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সেই কাজটি করবে। আমাদের যে দুজন ছাত্র-প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায়, আমরা সেই কাজটি করব।’
বিশাল একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ভুয়া সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক বা ভুয়া আন্দোলনকারী হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে সারজিস আরও বলেন, তারা তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন কমিটি তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন খবরও পেয়েছি যে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে নাকি একটি কমিটি হয়েছে, যারা মসজিদে গিয়ে মসজিদ কমিটিকে পদত্যাগ করতে বলেছে। অথচ আমরা আমাদের জায়গা থেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটি দিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য এবং কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই মানুষগুলো এমন কিছু কাজ করছে, যা অপ্রত্যাশিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসার পর আমরা এই প্ল্যাটফর্মটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’