দেশের অন্যতম চালিকাশক্তি এই তরুণরাই। তারা এমন সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ তৈরী করবে যা দেখে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো শিক্ষা নেবে। তাই তরুণদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ চাই বলে জানিয়েছেন জাপান বিজনেস ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান আলী।
তিনি পড়াশোনা করেছেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। টি ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকান্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ থেকে সিএ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। সিঙ্গাপুরে এনসন রোডে অবস্থিত মার্কেটিং ইন্সটিটিউট অফ সিঙ্গাপুর থেকে অ্যাডভান্স মার্কেটিং, লিডারশিপ সহ বেশ কয়েকটি ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করেন এবং জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি ইয়োকোহামা রাবার কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচের মার্কেটে দায়িত্ব পালন করেছেন । দায়িত্ববোধ এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা তাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানির এমডি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশে কর্মসংস্থান তৈরী, উদ্যেক্তা তৈরী এবং বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছেন। এই তরুণ উদ্যোক্তার সাথে আলোচনাকালে কেমন বাংলাদেশ চাই? তা নিয়ে কথা বলেছেন সিনিয়র রিপোর্টার খন্দকার হানিফ রাজার সাথে।
তিনি জানান, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ এখন একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ। আপনারা জানেন, আমাদের যে পরিমান বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে এবং আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে পরিশ্রম করতে পারে তাতে শুধুমাত্র আমরা যদি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হতে পারি তাহলে খুব দ্রুত আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
গোল্ডম্যান স্যাক্স এর মতে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১ টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে একটি। রপ্তানি আয়ের অব্যাহত বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশমান। আমরা সবাই যদি মনোযোগ দিয়ে কাজ করি, যার যার দায়িত্ব পালন করি, দেশকে ভালোবাসি, তাহলে আমাদের এ দেশ হবে পৃথিবীর অন্যতম স্বপ্নের দেশ।
* কিভাবে আমরা কর্মসংস্থান তৈরী এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারি?
দেখুন আমাদের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সাথে নজর দিতে হবে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের দিকে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিজগুলোতে স্টেট অফ আর্ট টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে এবং ফরিন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান ব্যাংকিং নীতিমালা পরিবর্তন করে আরো আধুনিক এবং ব্যবসা বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যের নীতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে শ্রম খুব সস্তা এবং আমাদের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, খুব সহজেই আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারি। পাশাপাশি আমাদের ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্লু অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন ধরনের সম্পদ কাজে লাগানোর অর্থনীতি। আমি আশা করি, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাংলাদেশের যেমন দিতে পারে আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তা, তেমনি বদলে দিতে পারে সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারি ।
* সফল হতে তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কি ?
তরুণরা আমাদের ভবিষ্যত লিডার। তারাই আমাদের এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে তার জন্য তাদের তৈরী হওয়াটা খুব জরুরি। তাদের প্রচুর বই পড়তে হবে, কলেজ বা ভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে হবে এবং নেতা হবার প্রবণতা থেকে দূরে সরে আসতে হবে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চেয়েও জরুরি ভালো মানুষ হওয়া এবং উদ্যেক্তা হবার স্বপ্ন দেখা। বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, স্টিভ জবসের মতো মানুষদের দেখেন, তারা কেউই ডিগ্রি নেননি কিন্তু সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা তাদের সফলতার শীর্ষ পর্যায়ে নিয়েছে।
আপনি যত বিদেশ ভ্রমণ করবনে, বই পড়বেন, সৃজনশীল চিন্তা করবেন, মানুষের সাথে মিশবেন, আপনার মন তত মুক্ত হবে এবং আপনি তত সমৃদ্ধ হবেন।
* সবসময়ই পরামর্শ দেই উদ্যেক্তা হতে কিন্তু কিভাবে উদ্যেক্তা হওয়া যায় তার জন্য কিছু পরামর্শ যদি দিতেন?
উদ্যেক্তা হতে চাইলে আপনি যে বিজনেস করতে চান তার একটি সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। আপনি যে বিজনেস কাজ করতে চান, তার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। প্রোডাক্ট, প্রাইস, কমপিটিটর, মার্কেট এনালাইসিস, রিস্ক ফ্যাক্টর এনালাইসিস। নতুন উদ্যেক্তারা প্রোডাক্ট কাস্টিং, এবং অপারেশন কস্ট নিয়ে অনেক ভুল করেন, অনেকেই ভাবেন আজকে শুরু করলে আগামীকাল থেকেই প্রফিট আসবে কিন্তু মনে রাখতে হবে বিজনেস কখনো রাতারাতি দাড়াইনা, বড় বড় কোম্পানিগুলো ন্যূনতম এক বছরের অপারেশন কস্ট নিয়ে শুরু করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নতুন উদ্যেক্তাদের অনেকেই বলে শুরু করো, প্রয়োজনে ফান্ডিং করবো কিন্তু খুব প্রয়োজনের সময় সেই মানুষগুলো দূরে সরে যেতে পারে। ৯৫% বিজনেস ফেল করে ফান্ডিং ফেল করার কারণে।
* অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটুকু জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
দেখুন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান শর্ত। চায়না ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। ১৯৭৫ সালে আমেরিকার সাথে যুদ্ধ শেষ হবার পর তাদের অর্থনীতি বর্তমানে অনেক উন্নত এবং গত কয়েক বছরে ব্যাপক বিদেশী বিনিয়োগ তারা পেয়েছেন। সুতরাং বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য, রপ্তানি ঠিক রাখার জন্য, বিদেশে দক্ষ ম্যানপাওয়ার পাঠানোর জন্য একটি দেশকে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হতে হবে বলে জানান তিনি।