ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে পালিয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বৈরশাসক প্রধান শেখ হাসিনা। এরপরই সারাদেশে প্রায় ৪৫০টি থানা পুলিশ ফাঁড়িসহ পুলিশের ওপর হামলা করে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। এরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এদিকে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস-সহ জেলা পুলশি লাইনস গুলোতে চলছে কর্মবিরতি ও মিছিল।
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাতে বাধ্য করে দেশবাসীর কাছে তাদের ‘ভিলেন’-এ পরিণত করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সৈনিকদের অভিনন্দন জানাই দেশ থেকে স্বৈরাচার উৎখাত করার জন্য।
সাধারণ পুলিশ সদস্যরা পুলিশলাইনসে কর্মবিরতি দিয়ে তারা মিছিল করেছেন। মিছিলে সুবিধাভোগী পুলিশের কোনো দায় তারা নেবেন না বলেও স্লোগান দেন। অনেকে আবার পুলিশের নাম পরিবর্তন করে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কথাও বলেছেন।
চকরীয়া থানার একজন এস আই এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা বলির পাঠা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমতার খায়েশ চরিতার্থ করেতে গিয়ে আমাদের গুলি করার নির্দেশ দেন। কর্মকর্তাদের নিজেদের অবস্থান পরিপূর্ণ করতে আমাদের ব্যবহার করছে। অথচ, আমরাই হলাম জনগণের আসল বন্ধু। আজ যারা নির্দেশদাতা, তারা পালাতক। আমরা নিরাপত্তাহীনতায়।
পুলিশের এসবি ইনফরমেশন শাখার এসআই অনন্ত মেহেদী তার ফেজবুকে লেখেন, ‘দেশে সাবেক সরকারের চলমান দুর্নীতি ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বহুদিন ধরে চলছিল সরকারের প্রত্যেকটি সেক্টরে। পুলিশকে অস্ত্র হাতে দাড় করিয়ে দিয়ে যার ফায়দা লুটেছেন খোদ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ দেশের রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী, আমলা ও প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পুলিশকে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আদেশের আড়ালে গুলি করার আদেশ দিয়ে নিরীহ মানুষ মেরে যার যার আসন টিকিয়ে রেখেছেন। আজ পুলিশকে যেভাবে ভয়াবহ নির্মম ও নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তা অবর্ণনীয়।
শুধু পুলিশ কেন সব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানেন, দেশ কীভাবে চলছে। কই, তখন তো কোনো আমলা ও সরকারি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে তো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। সবাই তৈল মর্দনে ব্যস্ত ছিলেন। একটা বাহিনী কে বলির পাঁঠা বানিয়ে সরকারের অন্যান্য মহল এখন পপকর্ন নিয়ে বসছেন। বাঙালি আসলে জানে না, কোথায় সংস্কার প্রয়োজন। আজ যারা নির্মমভাবে নির্বিচারে পুলিশ মারলেন, তাদেরও কিন্তু পরিবার আছে, স্ত্রী-সন্তান আছে। যেই পুলিশ সদস্যকে আপনি মারলেন সে হয়তো বা জীবনে কোনো মানুষকে একটা গালিও দেননি। একজন মানুষকে মেরে আপনি কীভাবে ঘুমালেন? তার মৃতদেহটা, বিভৎস চেহারাটা আপনার চোখে ভেসে ওঠেনি?
ভবিষ্যতে পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার দিলে আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ হতে বিরত রাখার অনুরোধ রইল।
সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, মাদারীপুর জেলা পুলিশ লাইনের পুলিশ অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তাদের দুই দফা দাবিও রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপাতত জেলা পুলিশ লাইনের পুলিশ বাইরে ডিউটি করছে না। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদের পুলিশ লাইনের ভেতরে রেখেছি। ফলে, তারা অস্ত্র ও গুলি জমা রেখে বিশ্রামে রয়েছেন। তবে, তারা দায়িত্বরত অবস্থায় রয়েছেন। তাদের কোনো দাবি রয়েছে কিনা, তা আমি জানি না। যদি থাকে, তবে আমরা তাদের কথাগুলো শুনব।
সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমার জেলা পুলিশ লাইনে কোনো অসুবিধা নেই। অধিনস্তরা বিক্ষোভ করছেন না, বা তারা কর্মবিরতিতেও নেই। দেশের পরিস্থিতি এই খারাপ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সবাই ট্রমার মধ্যে রয়েছে। কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে। অন্য কোনো মহল এই পরিস্থিতি থেকে সুবিধা নিতে চাচ্ছে। সেজন্য, নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা শুধু সাতক্ষীরা জেলায় না, আমি যতটুকু জানি কোথাও এমন ধরনের সমস্যা নেই।