প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪, ৯:০৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪, ৯:১৯ অপরাহ্ন
অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিদর্শক মো. কবিরুল হাসানের বিরুদ্ধে। নেটে ফাঁস হওয়া ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে এক রেস্তোঁরা ম্যানেজারের সাথে কথোপোকথনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ফাঁস হওয়া অডিও কল রেকর্ডের কথোপকথনে শোনা যায়, এ প্রান্ত থেকে ফোন করেন পটুয়াখালীর নিউ স্টার বাফেট রেস্তোঁরার ম্যানেজার নুরুজ্জামান। অপরপ্রান্ত থেকে বলা হচ্ছে এই নূরুজ্জামান, বলেন। জবাবে নূরুজ্জামান বলেন, আসসালামালাইকুম স্যার, পরিদর্শক: বলেন। স্যার আপনাকেতো প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা দেই, লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২ লাখ টাকা, এছাড়াও প্রতি পারমিটের জন্য অফিস খরচ বাবদ ২ হাজার টাকা করে দিই। পরিদর্শক: এগুলো বাদ দেন, ফোনে এত কথা বলার দরকার কি? ম্যানেজার পারমিট প্রতিতো আপনাকে দিই, আর আপনি স্যার দয়া করেন। পরিদর্শক: কোনডা? ম্যানেজার: আপনার ইন্সপেক্শন, ৭০ হাজার টাকা করেতো দিই। বর্তমানে স্যার অফিসের অবস্থা অতটা ভাল না, আপনাদের হেল্প ছাড়া চলতো পারবো না স্যার। পরির্দশক: না না কিছুই লাগবে না। ম্যানেজার: স্যার, স্যার। পরিদর্শক: বুঝলেন যা বলার এসে বলবেন। ফোনে এত কথা বলার দরকার নেই, কি কাইছি বোঝেন। নূরুজ্জামান কেন কথা বলেন না? ম্যানেজার: উনি লাইনে নাই। আমি বলছি স্যার। পরিদর্শক: কথা না বলতে পারলে আপনে ওহিডা পাইলেন কই? আপনি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না, তাইলে আমনে ওইডা পাইলেন কেমনে। আমনে ওহি দেন কেমনে? ম্যানেজার: আমিতো জানি স্যার, এর লাইগ্যা স্যার। পরিদর্শক: এগুলো জানার দরকার নেই। আর আপনে এগুলা সব কথা ফোনে ফোনে কাহিনী করতেছেন। নূুরুজ্জামার এগুলো কিন্তু ভাল না। ম্যানেজার: স্যার ফোনে ফোনে শেষ আর কন্টাক্টতো হচ্ছে, পরিদর্শক: নূরুজ্জামান এগুলো কিন্তু ভাল না। ম্যানেজার: স্যার আপনে হেল্প করেন আপনার হেল্প ছাড়াতো হবে না।
আরেকটি অডিও রেকর্ডে শোন যায়, পরিদর্শক: নুরুজ্জামান, ম্যানেজার: স্যার, স্যার। এই তুমি মোবাইলে এ কথা বলো কারণ কি? বলতো। তোমার উদ্দেশ্য কি? ম্যানেজার: স্যার একটু ই করেন, প্লিজ। পরিদর্শক: না না তোমার সঙ্গে আর কথা বলবো না, ম্যানেজার: স্যার। পরিদর্শক: কথা বললে তুমি একটা জিনিসের পেছনে রেফারেন্স টানো, এটা টানো, ওই টানো কারণটা কি? বলোতে নূরুজ্জামান। ম্যানেজার: কি করবো স্যার, পরিদর্শক: ওইটার রেফারেন্স এইখানে কেন টানো, আউল-ফাউল কথা-বার্তা বলো কেন বলো? ম্যানেজার: স্যার আসলে.. পরিদর্শক: বলো বলো, এগুলো কি তোমার বলা ঠিক? তোমাকে করতে বলেনি। তোমার যে কর্তৃপক্ষ তাকে জানাবা। সেইখানে বলবা তাই না? তুমি সেখানে ইতিহাস গাও ক্যান। আমাকে এটা বলো ইতিহাস গাওয়ার কোন যুক্তি আছে? ম্যানেজার: স্যার, পরিদর্শক: ইতিহাস কি বলেন? ম্যানেজার: প্লিজ স্যার। স্যার আপনি যদি এত কঠিন হন তাহলে আমরা চলবো কিভাবে স্যার। পরিদর্শক: আমি কেমনে কঠিন হলাম। তোমরাইতো কঠিন করছো। আমি যদি কঠিন হই তাহলে তোমরা কি ব্যবসা করতে পারবা? দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। কঠিনও হও তোমরা, আবার কথাও উল্টো বলো তোমরা। এর কারণডা কি? এডা আমাকে বোঝাওতো। আমি যদি কঠিন হই তোমরা কি আইন মতো চালাও বলোতো? কঠিন হইলে কি দোকন চলে? বলো, ম্যানেজার: সে কারণেতো স্যার আপনাকে প্রতি মাসে দিয়ে আসছি। পরিদর্শক: ইতিহাস টানো কেন। এই বলে তাদের দু’জনের কথোপোকথন শেষ হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিদর্শক কবিরুল হাসান পটুয়াখালির পরিদর্শক (ক-সার্কেল) হিসেবে কর্মরত আছেন। তার ব্যবহৃত গ্রামীণ নম্বরে এই কথোপোকথন হয়। তিনি দীর্ঘ দিনযাবদ এমন ধরণের সুবিধা নিয়ে আসছেন। এখন তিনি মাসিক পেমেন্টসহ বিভিন্ন ধরণের সুবিধা বৃদ্ধি করতে ম্যানেজারকে ফোন করে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এ খবর ইতোমধ্যে অধিদপ্তরে কর্মরতদের মুখে মুখে। তারা কোন অসৎ কর্মকর্তা যদি নিজের ফায়দা হাসিল করতে চায়, তাহলে দ্রুত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন। তা না হলে ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে পরিদর্শক কবিরুল হাসান বলেন, তার সাথে আমার কথোপোথনে কোন আর্থিক লেনদেনের কোন কথা বলিনি। আমাকে হেয় করতে কেউ প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।