ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি ও ফ্ল্যাটসহ অঢেল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালত এসব সম্পদ জব্দ করে হেফাজতে নিতে দুদককে অনুমতি দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালতে মতিউরের সম্পদ জব্দের আবেদন করে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় ৮৬৬ শতক জমি এবং ঢাকার চারটি ফ্ল্যাট।
দুদকের আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত এসব সম্পদ জব্দ করতে নির্দেশ দেন।
সম্পতির মধ্যে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় মতিউরের ১১৪ শতাংশ জমি। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মারজাল ইউনিয়নে লায়লা কানিজের ৫২২.৫২ শতাংশ জমি ও বসুন্ধরায় ২৪৪৫ স্কায়ার ফিটের ফ্ল্যাট। নরসিংদীতে মতিউরের ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের ২৭৫.৮৫ শতাংশ জমি। নরসিংদীতে মতিউরের মেয়ে ফারজানা রহমান ইন্সিতার ১০৬.৫৬ শতাংশ জমি ও ঢাকার বসুন্ধরায় ৫ কাঠা জমির ওপর বহুতল ভবন। ধানমন্ডিতে মতিউরের আরেক স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর একটি ফ্ল্যাট ও বসুন্ধরায় ৫ কাঠা জমি।
ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনায় আসেন সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অঢেল সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়।
এরপর তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুদকের আবেদনে মতিউরকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্নবেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরি করে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে বিপুল বিত্ত বৈভবের হলেন তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। একাধিক বাড়ি, কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাট, রিসোর্ট, জমি, শিল্প কারখানার মালিকানাসহ শেয়ারবাজারেও বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে তাদের।
এরই মধ্যে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে। তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরানো হয়েছে প্রভাবশালী ও আলোচিত এই সরকারি কর্মকর্তাকে।
মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠায় দুদক।
মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী এবং নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী ও সন্তানের নামে রোববার দুদক এসব চিঠি দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আলোচিত এই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো জমি আছে কিনা, তা জানতেই কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাঠানো চিঠিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নাম উল্লেখ করে ঢাকা, নরসিংদী ও মুলাদির সাব রেজিস্ট্রার অফিস ও ভূমি অফিস, রাজউক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন দপ্তরেও দেওয়া হয়েছে আলাদা আলাদা চিঠি।
এক সময় সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন লাকী। চাকরি ছেড়েই রাজনীতিতে এসে ২০২২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান হন।