বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করতে চান। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেই তথ্য সংকটে পড়েন। অর্থাৎ দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে যেতে হলে কী কী করতে হয়? কোথায় কী ভাবে আবেদন করতে হয়, অথবা কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেন এবং কী ভাবে ভর্তি হওয়া যায় এসব সমস্যাগুলো সামনে আসে।
এসবের উত্তর খুঁজতে আমরা সব সময় আস্তাভজনদের কাছে যাই। অথবা পরিচিত কারো কাছে যাই। এখন ইন্টারনেটের বরাতে আমাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। আমরা ঘরে বেসইে এখন অনেক কিছুর সমাধান পেয়ে যাই। ভারতে পড়ালেখা করতে যেতে আগ্রহী এমন শিক্ষার্থীদের জন্য দৈনিক জবাবদিহির বিশেষ আয়োজন। নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো।
আসলে ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশ ভারত নয়। অথবা ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতের বিশ্ববিদাল্যয়গুলোর ঠিক তুলনাও করা চলে না। তবে এ কথা বলা যায় যে, বিশ্বের অন্যন্য অনেক দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার মান বেশ আলোচিত।
বিশেষ করে ভারতের রবীন্দ্রভারতী (কলকাতা) এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঞ্জাবের চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বব্যাপী বেশ খ্যাতি রয়েছে।
আমরা শুরুতেই আলোচনা করবো ভারতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স (আইসিসিআর) একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। আসলে কেন্দ্রীয় ভারত সরকার আলাদা-আলাদা রাজ্যের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে আইসিসিআর-এর মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ দিয়ে থাকে। এ সংস্থাটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকেও বৃত্তি প্রদানের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে থাকে।
মূলত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো; সাধারণত ভারতে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি পেতে ৩ ধরণের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ভারত সরকারের অর্থায়ন এবং অন্যটি বেসরকারিভাবেও বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
এছাড়াও রয়েছে সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়। সার্ক বা সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়টি আসলে ভারতীয় কোন বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়ে থাকে। এটি ভারতের নয়াদিল্লিতে স্থাপিত হয়েছে। এ কারণে ভারতে উচ্চশিক্ষার প্রসঙ্গ এলেই সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম সঙ্গত কারণেই চলে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়টি গত ১৪ বছর অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তিও সুযোগ করে দিয়েছে। সব দেশের শিক্ষার্থীদের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও রয়েছে দশ ভাগ কোটা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) গণিত, আইন, কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি এবং ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসের ওপর দুই বছর মেয়াদি মাস্টার ডিগ্রি এবং পিএইচডির জন্য আবেদন করতে পারেন।
আইসিসিআর-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করতে বৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারন।
সাধারণত যে সব নিয়ম-কানুন মানতে হয় তার মধ্যে রয়েছে- আবেদনকারীর বয়স। মনে রাখতে হবে যদি আপনার বয়স ১৮-৩০ এর মধ্যে হয় তবেই আপনি আবেদন করতে পারবেন। একজন শিক্ষার্থীকে আবেদন করতে হলে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিই বা বিটেক আবেদনকারী প্রার্থীদের এইচএসসিতে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও রসায়ন বিষয় থাকতে হবে। আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা আছে কী না জানার জন্য (টোফেল বা আইইএলটিএস) স্কোরও কত তা জমা দিতে হয়। পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা যাচাই করতে ৫০০ শব্দের একটি ইংরেজী প্রবন্ধ লিখে তা জমা দিতে হয় আবেনকারীকে। আবেদনের সঙ্গে আবেদনকীরর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের নম্বরপত্র জমা দিতে হয়। অর্থাৎ অনলাইনে আবেদনের সময় নম্বরপত্রটি অনলাইনে আপলোড করতে হয়।
এছাড়াও আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো ইংরেজীতে ভাষান্তর করে জমা দিতে হয়। কারণ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজী ছাড়া অন্য ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। আইসিসিআর বৃত্তিপ্রাপ্ত হলে বাৎষরিক ন্যূনতম সাড়ে ৭ হাজার বা ৮ হাজার মার্কিন ডলারের মেডিকেল বীমা বাধ্যমূলক। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাড়ায় সাড়ে নয় লাখ টাকার মতো। অবশ্য এ অংকটা কম বা বেশি হতে পারে। এটা পরিবর্তন হয়। একটা কারণ হলো সে দেশের সরকারের নির্ধারিত ফি’র পরিবর্তন হলে। আরেকটি হলো-ডলারের চলতি বাজারমূল্যের কারণে। এছাড়াও যেমন তিন বছরের জন্য ম্যানেজমেন্ট কোর্সে সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখ, চার বছরের ফরমাসি কোর্সে লাগে সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ এবং ইঞ্জিনিয়ারিয় কোর্সে ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা লাগে। আর হ্য এটা বলা-ই বাহুল্য যে প্রত্যেক আবেদনকারীকে ভর্তির পর হোস্টেলে থাকতে হয়।
ভারতে বৃত্তি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য বিস্তারিত জানতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের শিক্ষা উইংয়ে। ঠিকানা- (প্লট নম্বর: ১-৩, পার্ক রোড, বারিধারা, ঢাকা ১২১২। অথবা ফোন করতে পারেন-৫৫০৬৭৩০১-৩০৮ এক্সটেনশন-১০৯৬/১১১২ এই নাম্বারে।