ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার তদন্ত করতে শনিবার (১ জুন) সকালে নেপালের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
ডিবি পুলিশ ও এনসিবির একজনসহ মোট চারজনের একটি দল নেপালের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুনুর রশিদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ গেটে গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের সহকারী সিয়াম নেপালে আটক হয়েছেন বলে শুনেছি। এছাড়া হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর অন্যান্য আসামিরাও নেপালে যাওয়া সম্ভাবনা আছে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা সেখানে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য ক্রসচেক করা হবে।
হারুন বলেন, ইদানিং বাংলাদেশের অনেক সন্ত্রাসী নেপালের কাঠমান্ডুর মাটিকে পালানোর রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে আমাদের সংসদ সদস্য আনার হত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন এই কাঠমান্ডুর মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে চলে গেছেন। আরও অনেক আসামি এখানে আত্মগোপনে থাকতে পারে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। এর আগেও অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নেপালে থাকার কথা শুনেছি। আমরা যখন যেখানে গিয়েছি তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়েছে। কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কিন্তু আমাদের ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক হয়েছে। মূলত আমরা তদন্তের কাজে নেপাল যাচ্ছি। আমরা কাঠমান্ডু পুলিশের সঙ্গে ইন্টারেকশন ও তদন্ত কাজে সহযোগিতা চাইব।
সিয়াম হাসান নামে নেপালে একজনকে আটক করা হয়েছে। সেজন্যই কি আপনারা নেপাল যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, সব বিষয় নিয়েই আমরা কাঠমান্ডু যাচ্ছি। অনেক আসামিই সেখানে থাকতে পারেন। আমরা যাচ্ছি তথ্য সংগ্রহ করতে। আমরা মনে করি যে, ভবিষ্যতে যাতে কোনো অপরাধী অপরাধ সংঘটিত করে নেপালে বা কাঠমান্ডু যেতে না পারে। সে বিষয়টি আমরা কাঠমান্ডু পুলিশকে জানাব। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় কয়েকজন আসামি কাঠমান্ডু গেছেন। এরপর কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ সেখানে থাকতে পারেন। সেই বিষয়েই তদন্ত করতে কাঠমান্ডু যাচ্ছি।
এর আগে কিন্তু আপনি বলেছিলেন, সিয়াম হাসান নেপালে থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে জানতে আপনার মন্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আমরা কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে কাঠমান্ডু পুলিশকে জানিয়েছি যে সংসদ সদস্য আনার হত্যায় জড়িত সিয়ামসহ কয়েকজন আসামি কাঠমান্ডু থাকতে পারেন। তারা যদি থাকে তাহলে তাদের যেন গ্রেপ্তার করা হয় সেজন্য অনুরোধ করেছি। এই বিষয়ে অগ্রগতি জানতে আমরা নেপাল যাচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ তালুকদারকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বাংলাদেশে আমাদের মূল আসামি কয়েকজন আছে। তাদের সঙ্গে তো কথাবার্তা হয়েছে। এমপি আনার হত্যায় জড়িতরা ছাড়াও অনেক অপরাধী কিন্তু কলকাতা রুটকে ব্যবহার করছে। সংসদ সদস্য আনার হত্যায় জড়িতরা যে কলকাতা রুট ও কাঠমান্ডু রুট ব্যবহার করেছে সেটা আমরা কলকাতাকে যেমন বলেছি, নেপালকেও বলব।
এর আগে গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আনার তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার (আনার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিন ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে। পরে বুধবার (২২ মে) ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে।