ব্যাংকিং খাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ প্রতিনিয়তই কমছে। স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করলে প্রফিট বা মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় এ খাতের প্রতি তাদের আগ্রহ কমছে; জানান অর্থনীতিবিদরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে ৩৬টি কোম্পানি রয়েছে; যার মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে ২৬টি কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে। অর্থাৎ ৭২ শতাংশ কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমেছে। কোম্পানিগুলোর হালনাগাদ তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের (২০২৪) ৩১ মার্চে ব্র্যাক ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। এপ্রিল মাসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০৬ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৩২ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০১ শতাংশ। ইস্টার্ণ ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এপ্রিল মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ০৮ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিযোগকারীদের শেয়ার ছিল ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এপ্রিল মাসে তা হয়েছে ৪৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে শেয়ারের পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০২ শতাংশ। আইএফআইসি ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর এপ্রিল মাসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০৪ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকে মার্চ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ১২ শতাংশ।
মিডল্যান্ড ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ১৪ শতাংশ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ন্যাশনাল ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এপ্রিলে এসে তা হয়েছে ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০২ শতাংশ। এনআরবিসি ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ০১ শতাংশ। ওয়ান ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩২ দশমিক ০২ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ৩১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ২১ শতাংশ। দি প্রিমিয়ার ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪১ দশমিক ০৯ শতাংশ। এপ্রিলে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পুবালী ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০২ শতাংশ। রুপালি ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এসবিএসি ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এপ্রিলে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০৭ শতাংশ। শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সাউথইস্ট ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ট্রাস্ট ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ০ দশমিক ০২ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৩০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এপ্রিলে তা হয়েছে ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ২১ শতাংশ। উত্তরা ব্যাংকে মার্চে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এপ্রিলে বিনিয়োগ ছিল ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে শেয়ার কমেছে ০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকি জবাবদিহিকে বলেন, ইদানিংকালে ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা, গুজব ছড়িয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করলে দ্রুত মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এসব কারণে ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম থাকে। তবে ভালো ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে বলে জানান তিনি।