মৃত্যুদণ্ডের আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনো আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চূড়ান্ত আদেশের আগে বিভিন্ন কারাগারে কনডেম সেলে যারা বন্দী রয়েছেন তাদেরকে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি তিন কয়েদির রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।
রায়ে আদালত জানায়, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে মৃত্যু (কনডেম) সেলে রাখা যাবে না।
বিচারিক প্রক্রিয়া (ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও রিভিউ) এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন) শেষ হলেই কেবল একজন আসামিকে কনডেম সেল বা কারাগারে নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দি রাখা যাবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা বা বিশেষ কারণে আলাদা সেল বা কনডেম সেলে রাখার প্রয়োজন হলে সে বিষয়েও তাকে নিয়ে শুনানি করতে হবে।
রিটকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
আদলত আরো জানায়, যাদেরকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে, তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে। এ প্রক্রিয়া দুই বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দণ্ডবিধিতে কনডেম সেলে রাখাই এক ধরনের শাস্তি। কাজেই মৃত্যুদণ্ডের রায়ে পর কনডেম সেলে রাখা হলে তা দুইবার সাজার সমতুল্য।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আনজীবী শিশির মনির এই রিট দায়ের করেন।
রিটে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেনো আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
একইসঙ্গে রুলটি বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়।
রিটের পর ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।