দুই দিনের সফরে, বুধবার রাতে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। পরের দিন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি দেখা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ সময় শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণপত্র তুলে দিবেন তিনি।
ঢাকা সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিনয় মোহন কোয়াত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এই সফর আগে ২০ এপ্রিল নির্ধারিত ছিল, কিন্তু তা পরিবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশের তিস্তা নদীকেন্দ্রিক চীনের পরিকল্পিত প্রকল্পটি বিনয় মোহন কোয়াত্রার সফরে আলোচনায় আসতে পারে। তার এই সফরে চীনের বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের আসন্ন এক যৌথ সামরিক মহড়ার কারণে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে পর্যবেক্ষণ করছে ভারত। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের ড্রেজিং এবং উন্নয়ন প্রকল্প। তিস্তা নদী সংলগ্ন অঞ্চলকে ইকোনমিক জোনে পরিণত করার পরিকল্পনা এটি। প্রকল্পটি ২০২০ সালে আলোচনায় আসে।
তখন থেকেই প্রকল্পটি ভারতের নজরে রয়েছে। এটি ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর এবং দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর কাছাকাছি পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের একটি প্রধান আন্তঃসীমান্ত নদী তিস্তা। ভারত এখনো বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করেনি। নদীটির বাংলাদেশের অংশ শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়।
কারণ ভারত তার অংশে পানি ধরে রাখে। ফলে বাংলাদেশের নদীনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিস্তার পানি প্রবাহের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশকে সাহায্য করা চীনের প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ এর থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।
মে মাসে চীন ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যৌথ সামরিক মহড়াটির নাম দেয়া হয়েছে ‘চীন-বাংলাদেশ গোল্ডেন ফ্রেন্ডশিপ ২০২৪’। দুই সামরিক বাহিনী হাইজ্যাকিং, সন্ত্রাস নির্মূল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে মিশ্র গ্রুপে যৌথ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা বহুবার আমাদের কথা জানিয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অথবা অন্য কোথাও সব ধরনের ঘটনার ওপর আমরা নজর রাখি। বিশেষ করে সেই ধরনের ঘটনা, যা আমাদের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর যা প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সব বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করে থাকি।
ভারতে আগামী জুন মাসে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর দিল্লিতে প্রথম যে বিদেশি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফর করবেন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাসের প্রথমার্ধে শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করবেন। অর্থাৎ এটা ঘটবে ভারতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক মাসখানেকের ভেতরেই। শেখ হাসিনা এই বছর চীন সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে তিস্তা প্রকল্পটি বিশেষভাবে আলোচিত হতে পারে।