দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২১ এপ্রিল) আইনজীবী ফোরামের দফতর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিগত ৬ এবং ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে 'সভাপতি' পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আপনাকে মনোনীত করে। বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করে।
এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুঁথী ও পরে শাহ মনুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী যোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে ৮ মার্চ প্রত্যুষে সমিতির অডিটরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরাম নেতাকে আসামি করে বিগত ৯ মার্চ শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনকারী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী ও উক্ত নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুসকে (কাজল) যথাক্রমে গত ৯ ও ১০ মার্চ উপরোল্লিখিত সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তার করে তাদের যথাক্রমে ৩ দিন ও ৪ দিন ডিবি অফিসে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা উভয়েই দুই সপ্তাহ কারাভোগ করেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাকে সভাপতি পদে ও এডভোকেট ফাতিমা আকতার, এডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম ও এডভোকেট সৈয়দ ফজলে এলাহী অভিকে নামকাওয়াস্তে সদস্য পদে বিজয়ী দেখানো হয়।
উপরোক্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৪ মার্চ আপনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনিসহ বিজয়ী ঘোষিত তিনজন সদস্যকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২০ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত ২৭ মার্চ এক চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়।
সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষিত তিনজন ফোরাম সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও সংগঠনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আপনি গত ৪ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এছাড়া আপনি একইদিন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বিগত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ বর্তমান অবৈধ সরকারের ডামি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তিনজন এমপি প্রার্থী ও বিএনএম নেতা, তৃণমূল বিএনপি, দল থেকে বহিষ্কৃত ও দলছুট কতিপয় সদস্যকে দিয়ে দল ও এর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বিষোদগার করেছেন।
এছাড়া আপনি আপনার বক্তব্যে আইনজীবী ফোরামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অবমাননাকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। অবৈধভাবে ঘোষিত আওয়ামী লীগ দলীয় তথাকথিত একজন সম্পাদকের হাতে হাত রেখে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আলোচনা শেষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি'র সিনিয়র সহ- সভাপতি হিসেবে আপনার এমন কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থী হিসেবে গণ্য করে সর্বসম্মতভাবে আপনাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি'র পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ২০ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হবে।