দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এদিনে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। তবে ঈদ উৎসবেও ছুটি মেলেনা চব্বিশ ঘণ্টার সংবাদ মাধ্যম, শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী, কারাগারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা হাসপাতাল, পরিবহন কর্মী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের। পেশাগত দায়িত্বের কারণে তাদের থাকতে হয় তৎপর। কাছের মানুষরা যখন ঈদের আনন্দে ব্যস্ত, তখন পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে উৎসব আনন্দের ঊর্ধ্বে কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনেও।
সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দকে নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সদস্যরা রাতদিন পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করেন। যারা নাড়ির টানে বাড়ি কিংবা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন, তাদের সবকিছু নিরাপদে থাকার জন্য নগরজুড়ে নিরাপত্তা দিতে প্রহরায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এ ছাড়াও মুমূর্ষু ও জরুরি রোগীদের সেবায় ঈদের দিনও হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা। ঈদে হাসপাতালের রোগী ও সেবাদানকারী কর্মীদের সময় কাটে সবচেয়ে করুণভাবে। অনেকে ছুটিতে চলে যাওয়ায় যারা দায়িত্বে থাকেন, তারাই বাড়তি চাপ সামলান দ্বিগুণ পরিশ্রম করে। তেমনই ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক নিজেদের ঈদ আনন্দ বাদ দিয়ে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। টিভি পর্দায় অন্যদের ঈদ আনন্দের যেন বিঘ্ন না ঘটে, তাই দায়িত্ব পালনে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন কর্মস্থলে।
ঈদের ছুটিতে মানুষজনের ঘরের তালা সুরক্ষার দায়িত্ব কিন্তু পাহারাদার, দারোয়ান, নিরাপত্তাকর্মীদের। সারা বছরে দায়িত্বের পাশাপাশি ঈদ এলে তাদের দায়িত্ব যেন আরও বেড়ে যায়। ঈদের সময় সবার ছুটি জুটলেও তাদের বেলায় খুব কম সময়ই ছুটি মঞ্জুর হয়। এ কারণে অফিস, আদালত, ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের সেই অর্থে ঈদ আনন্দ নেই বললেও চলে।
এদিকে যেকোনো হাসপাতালের দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় মানবতার সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকেরও নেই ঈদ ছুটি। এ সময় রোগীর সংখ্যা কিছু কম থাকলেও মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ রাখার কোনো উপায় নেই। তাই ডাক্তার, নার্স, আয়া ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদ ছুটি মেলে না।
ঈদ মানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশাল দায়িত্ব। ছুটি খুব কম সদস্যেরই মেলে। মিললেও তা দুই-এক দিনের বেশি নয়। তাতে অবকাশের তেমন কোনো সুযোগ নেই। সবাই এক কাতারে যখন ঈদের নামাজ আদায় করে তখনও এদের দায়িত্ব পালন করতে হয় বন্দুক কিংবা লাঠি-বাঁশি হাতে। ট্রাফিক পুলিশকে ঈদের দিনেও বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। রাস্তার বাস, ট্রাক, রিকশাই যেন তাদের পরিবারের সদস্য। ট্রেনের টিটি, ড্রাইভার, গাড়িচালক, লঞ্চ সাড়েং-সুকানিদের কথা ভাবাভাবির বিষয় হয়তো কেউ মাথায়ও আনেন না। কিসের ঈদ, কিসের পূজা! খুব কম সময়ই পরিবারের সঙ্গে তাদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ হয়।
চালক, কন্ডাক্টর, হেলপারদের কোনো ছুটি নেই। ঈদের দিনও তাদের ক্লান্তিহীন পথচলা। রাস্তা, গাড়ি, যাত্রীই হয়ে ওঠে তাদের ঈদ আনন্দ।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রোজার ঈদে ছুটি মিললেও, কোরবানির ঈদের সময় খুব ঝামেলা যায়। কারও ছুটি মেলে না।
মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনেরা খুব কম সময়ই ঈদের ছুটি পান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পরিবার-পরিজন থাকেন অনেক দূরে। ঈদে অনেক গুরুদায়িত্ব তাদের ওপর। ঈদের নামাজ পড়ানো, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। কোনোভাবেই দায়িত্ব পালন না করার সুযোগ নেই।
যারা চব্বিশ ঘণ্টার অনলাইন নিউজ পোর্টাল, রেডিও-টেলিভিশনে কাজ করেন তাদের অনেককেই ঈদের সময় দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দুই মাধ্যমের সাংবাদিকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কলাকুশলীদেরও থাকতে হয় দায়িত্বের মধ্যে। অবশ্য মিডিয়া হাউজগুলোকে ঈদ উৎসব নিয়ে অনেক নিউজ কাভার ও প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয়। এটাকেই তারা ঈদ আনন্দেরই অংশ হিসেবে মনে করেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে বেড়ানো এমন সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়।
টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরাও ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে না পারলেও ঈদের দিন অন্যের আনন্দে শামিল হয়ে সেই দুঃখটা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন তারা।