বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) রাজনীতিমুক্ত রাখতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েটের এ এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখুন। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট ক্যাম্পাস কীভাবে আদর্শ হয়ে উঠেছে তা দেখাতে প্রধানমন্ত্রীকে বুয়েট ভ্রমণের আহ্বান জানান এই শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। আমরা মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বুয়েট ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির অনুমতি দিয়ে খসড়া প্রণয়ন করে যখন বঙ্গবন্ধুর কাছে উপস্থাপন করা হয়, তিনি বলেছিলেন এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নষ্ট করা চলবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, সেটা বাস্তবায়ন করা হোক।
ক্যাম্পাসে রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো ছাত্রের পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বা সময় দেওয়া সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন এই শিক্ষার্থীরা।
ভারত ও ফেনী নদী নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
ওই ঘটনার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। চাপের মুখে তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে।
তবে সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর প্রতিবাদে ফের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ছাত্রলীগ, সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়, এ আন্দোলনের আড়ালে হিজবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির জড়িত।
এই অবস্থার মধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বুয়েট প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন এবং ছাত্ররাজনীতি চলবে বলে জানান।