‘আমি বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছি। ৪৪ বছর কারাভোগ শেষে বাইরে এসে প্রতারিত হতে হবে জানলে কারাগারেই থাকতাম। সর্বশেষ স্ত্রীও আমার সঙ্গে প্রতারণা করে সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছে। যৌতুকের মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। বিয়ে করে আজ আমি সর্বস্বান্ত।’
সোমবার (১ এপ্রিল) রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া। স্ত্রী ও শাশুড়ির মাধ্যমে শাহজাহানের প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টাইমস পিআর।
শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমাকে থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা যেন করে দেওয়া হয়।
আমাকে বেঁচে থাকার জন্য কাজের ব্যবস্থা যেন করে দেওয়া হয়। প্রতারক স্ত্রী ও শাশুড়িসহ এই চক্রের শাস্তির দাবি জানাই আমি।’
তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আমি ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের প্রায় দুই মাসের মাথায় আমার স্ত্রী ও শাশুড়ি আমার জমানো প্রায় ১৮ লাখ টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। পাশাপাশি আমার নামে যৌতুকের মামলা দেয়।’
শাহজাহান বলেন, ‘এখন কোথায় থাকব। কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। এখন খেয়ে-না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছি। অনাহারে জীবন চলছে। কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে খাই না।’
কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয় জানিয়ে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আমি টাকা পাই। সব মিলিয়ে আমার কাছে ১৮ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে বিয়ে করেই এখন আমি সর্বস্বান্ত হয়েছি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমি কেরানীগঞ্জের বাবুবাজারে বসবাস শুরু করি। সেখানে একটি চায়ের দোকান দিই।
একদিন অটোরিকশায় করে যাওয়ার সময় গাড়ির ভেতরে একটি ভেনিটি ব্যাগ পাই। পরে সেই ভেনিটি ব্যাগের মালিক ২৩ বছর বয়সী সাথী আক্তার ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি ফেরত দিই। পরে তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়। এরপর আমাকে বিয়ে করে সাথী। তারা যে এত বড় প্রতারক সেটি আমি জানতাম না।’
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করেছেন জানিয়ে শাহজাহান বলেন, ‘বিয়ের কাবিন পাঁচ লাখ টাকা হলেও আমার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা স্ট্যাম্পে লিখে নেয় আমার স্ত্রী সাথী আক্তার। এরপর বিয়ের ৫৩ দিনের মাথায় ঘরে থাকা সাত লাখ টাকা ও গহনা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দেয়। আমি থানায় মামলা দিতে গেলে সেই মামলা নেওয়া হয়নি। বলা হলো যে বউয়ের নামে মামলা হয় না। পরে আইনজীবীর সহযোগিতায় রবিবার আদালতে স্ত্রী-শাশুড়িসহ ছয়জনের নামে প্রতারণার মামলা করেছি। আদালত মামলাটি তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার মা-বাবা নেই। দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভাই-বোন নেই। আমার থাকার জায়গা নেই। কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের জোগান নেই। আমি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আমার ভাগ্নে আমাকে অটোরিকশা কিনে দেবে বলে আমার টাকা আত্মসাৎ করে।
পরে আমি কেরানীগঞ্জে একটি চায়ের দোকান দিলে, দোকানের কর্মচারী ছেলেটি দোকানে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়। এখন উভয় সংকটে জীবনযাপন করছি আমি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা, অন্যদিকে এক নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।