আগামী ৮ এপ্রিল বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। ওই দিন সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ফলে দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার। আর যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্য থেকে সেটা সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে। সেই সূর্যগ্রহণ দেখা উপলক্ষে ‘টোটাল একলিপস অব দ্য হার্ট’ শিরোনামে এক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে সূর্যগ্রহণকে সাক্ষী রেখে বিনা মূল্যে বিয়ের আয়োজনও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি অঙ্গরাজ্য থেকে তিন শতাধিক জুটি বিয়ের জন্য নিবন্ধন করেছেন।
পিপল ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ের জন্য জায়গাটি বিশেষভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হবে। প্রত্যেক দম্পতির জন্য রাখা হবে ওয়েডিং কেক ও ফল দিয়ে তৈরি কেক। আর থাকবে বিশেষ পানীয়র ব্যবস্থা। হালকা খাবারদাবারের ব্যবস্থা তো আছেই। বিনা মূল্যে কফি খেতে পারবেন উপস্থিত সবাই। সবকিছুই ফ্রি।
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে আশা দম্পতিদের শুধু নিজেদের বিয়ের পোশাক আনতে হবে। সেই সঙ্গে বিয়ের অনুমোদনপত্র। চাইলে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনও যোগ দিতে পারবেন এ উৎসবে।
পাঁচ দশকে দীর্ঘতম এই সূর্যগ্রহণ চলবে সাড়ে সাত মিনিট ধরে। এ ঘটনার সাক্ষী হতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছাকাছি বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে জড়ো হবেন ১০ লাখ মানুষ। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে অবস্থিত জলপ্রপাতটি সূর্যগ্রহণের পথে পড়ায় অনেকেই আগে থেকে হোটেল বুকিং করে রেখেছেন। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে রুমগুলোর ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকায় চাঁদকেও দেখা যাবে সাধারণ সময়ের চেয়ে খানিকটা বড়। চাঁদের আড়ালে চলে যাবে সূর্য। পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোসহ আরও কয়েকটি দেশ। সর্বশেষ এমন বিরল ধরনের সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৩ সালে।
যখন সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, তখনই শুরু হবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। চাঁদ যখন পুরোপুরি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি চলে আসবে, অর্থাৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে চারপাশ, সেই সময় নববিবাহিত দম্পতিরা মার্কিন বিয়ের রীতি মেনে একে অন্যকে চুমু খাবেন। অন্যরা তখন আনন্দে চিৎকার করবেন। এই ইভেন্টের আয়োজক রুডনি উইলিয়ামস বলেন, ‘জীবন একবারই এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ করে দেয়। আমরা কেবল সেটাকে কাজে লাগাচ্ছি।’
টেনেসিতে থাকেন কার্লোটা কক্স ও ম্যাথু হলওয়ে জুটি। বছরখানেক হলো বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এই সুযোগে সেরে ফেলবেন সেই আনুষ্ঠানিকতা। ৫০০ মাইল গাড়ি চালিয়ে আরকানসাসে যাবেন সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে। কক্স বলেন, ‘সেটা হবে এমন এক মুহূর্ত, জীবনভর যার গল্প আমি করে বেড়াব। অনেক পাখিও সেই দৃশ্য দেখতে বের হয়ে আসবে। আকাশে ওড়াউড়ি করবে। সূর্যগ্রহণ শেষে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। শব্দে সেই অনুভূতির বর্ণনা হয় না। আকাশে তারা থাকলে তো কথাই নেই। আর বিনা খরচায় বিয়ে করতে কে না চায়!’
সেখানে আরও থাকবে ডিনার আর গানবাজনার ব্যবস্থা। বেলুনে করে সে সময় আকাশে ওড়ার ব্যবস্থাও থাকবে। ৩০টি ব্যান্ড পারফর্ম করবে। আরও থাকবে খেলাধুলার ব্যবস্থা। রাতে শোয়ার জন্যও রাখা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ হোটেল সার্ভিস। রুডনি সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন, এই অনন্য অভিজ্ঞতা কেউ ভুলতে পারবেন না।
২০২৪ সালের ৮ এপ্রিলের পর আবার ২১৫০ সালে (১২৬ বছর পর) দেখা যাবে এ রকম সূর্যগ্রহণ।